২ লাখ রোহিঙ্গার থাকা-খাওয়াসহ সব দায়িত্ব নেবে তুরস্ক

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখের থাকা-খাওয়াসহ সব দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক। কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে ‘টার্কিস জোনে’ রোহিঙ্গাদের জন্য ৫০ হাজার শেড নির্মাণ, খাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও শৌচাগার, টিউবওয়েল স্থাপন ও জ্বালানির ব্যবস্থা করবে দেশটি।

রোববার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভ্রিম ওজতুর্ক এ সহায়তার আশ্বাস দেন।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তুরস্কের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থার সমন্বয়ক আহমেদ রফিক ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

রোববার বৈঠক শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে তারা (তুরস্ক) এক লাখ লোকের ২৪ হাজার ঘর করে দিতে চেয়েছিলেন। এখন বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। এজন্য তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের কাছে নতুন করে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘তারা (তুরস্ক) আজকে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এক লাখ লোকের সঙ্গে আরও এক লাখ লোক প্রায় ২ লাখ লোকের ঘর করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন। এক লাখ লোকের ঘর হয়ে যাবে, আরও এক লাখের যে প্রস্তাব দিয়েছি তা তাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ইনশাআল্লাহ এটাও আমরা হয়তো পেয়ে যাব।’

‘যে জায়গায় তারা ২ লাখ লোকের ৫০ হাজার শেড করবেন, সেখানে এরই মধ্যে তারা চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার অস্থায়ী তাঁবু করেছেন। তাদের খাওয়া ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধাগুলো তারা দিয়ে যাচ্ছেন। তুরস্কের সহযোগিতায় হচ্ছে এজন্য জায়গাটার নাম দেয়া হয়েছে ‘টার্কিস জোন’।

মন্ত্রী বলেন, ‘২ লাখ লোকের জন্য যে ৫০ হাজার শেড হবে সেখানে যা কিছু প্রয়োজন থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, টিউবওয়েল বিশুদ্ধ পানি সব দায়-দায়িত্ব তারা নেবেন। সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

কুতুপালংয়ে আরও যে ৫-৭ লাখ রোহিঙ্গা থাকবেন, সেখানেও তুরস্ক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে জানিয়েছে মায়া বলেন, ‘আমরা মনে করছি সেখানে ৫০ হাজার টয়লেট প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ইউনিসেফ ১০ হাজার, সরকার-এনজিও মিলে ৯ হাজার টয়লেট হয়ে গেছে। প্রায় ২০ হাজার টয়লেট হয়ে গেছে, বাকি থাকে ৩০ হাজার। তারা বলেছে, ২ লাখ লোকের টয়লেট ছাড়াও তারা ৩০ হাজারের মধ্যে ২০ হাজার টয়লেট করে দেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

রোহিঙ্গাদের চাপে কক্সবাজারের ৪ থেকে ৬ লাখ স্থানীয় লোক বেকার হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কষ্টে থাকা স্থানীয় লোকজনের খাদ্য, টয়লেট, চিকিৎসার ব্যবস্থাও তারা (তুরস্ক) করবেন বলে আমাদের কথা দিয়েছেন।’

ক্যাম্প এলাকায় জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য জ্বালানির ব্যবস্থাও তুরস্ক সরকার করবে বলে জানান মায়া।

তিনি আরও বলেন, ‘কুতুপালংয়ে আট হাজার টিউবওয়েল প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে আমরা এক হাজার স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। ইউনিসেফ আরও এক হাজার স্থাপন করে দেবে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি তার্কিস ব্লক বাদ দিয়ে আরও ২ হাজার ডিপ টিউবওয়েল করে দেয়ার জন্য। তাহলে অস্থায়ীভাবে তাদের সব দিক থেকে আমরা সুরক্ষা দিতে পারব। তারা আমাদের এ বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন।’

‘সব বিষয়ে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাবেন। যা সাহায্য আমরা চেয়েছি তা ইনশাআল্লাহ পাব বলে আমি বিশ্বাস করি।’

কবে নাগাদ পাওয়া যাবে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তুরস্কের সরকার আমাদের সেখানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমরা বলেছিলাম- তুরস্কের শরণার্থীদের আপনারা কীভাবে সাহায্য সহযোগিতা দিচ্ছেন সেটা আমরা দেখতে চাই। সেটা দেখার জন্য তারা আমাদের অনুরোধ করেছেন। আশা করি আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা সেটা দেখে আসব।’

‘যদি তাদের সঙ্গে মিলে যায়, তখন বলব ঘরগুলো ওই আদলে করে দেন। আসার পর বিস্তারিত বলতে পারব।’

রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে দিতে তুরস্ক চেষ্টা করছে কিনা- এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, ‘সব দিকে চেষ্টা করছে। মিয়ানমার সরকারের নতজানু অবস্থা, চাট্টিখানি কথা নয়। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমান নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে।’

এরই মধ্যে ২ লাখ ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে জানিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি বলেছেন নভেম্বর মাসের মধ্যে ৬ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। তখন সংখ্যাটা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব।’

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।