৩০ জনের নিচে চাপা পড়েও বেঁচে ছিলেন তিনি

তখন অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার রেশ লেগে রয়েছে চোখে-মুখে এমনকি গোটা শরীরে। হাতে-পায়ে চোট নিয়ে সারা রাত কাটিয়েছেন হাওড়া জেলা হাসপাতালে। বুধবার তাকে গার্ডেনরিচে রেলের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সেই হাসপাতালে ঢোকার মুখেই অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলেন আশিস সাতরা।

তারাতলায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন সাকরাইলের বাসিন্দা আশিস। প্রতিদিনই লোকাল ট্রেনে করে বাড়ি ফেরেন বছর তিরিশের ওই যুবক। ওইদিন সন্ধ্যাতেও ট্রেন ধরতে ছুটছিলেন। তখনই ঘটনাটা ঘটে যায়।

আশিসের কথায়, ‘এ রকম ভিড় আগে দেখিনি। দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে লোকাল ধরবো বলে যাচ্ছি। এমন সময় ভিড়ের চাপে নিচে পড়ে যাই। আর একটু হলেই দম বন্ধ হয়ে যেত। কোথা থেকে যেন একটা হাত আমাকে ভিড়ের মধ্যে থেকে টেনে বার করে আনল! বেঁচে আছি বিশ্বাসই হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক্সপ্রেস আর লোকাল ট্রেন এসে পড়ায় ওভারব্রিজে ব্যাপক ভিড় ছিল। হঠাৎ ধাক্কা মেরে আমায় কেউ ফেলে দেয়। প্রায় তিরিশ জনের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিলাম। জিআরপির লোকেরা আমায় টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অমৃতসরের যোধা ফটকের কাছে রেললাইনের ধারে রাবণ বধের অনুষ্ঠান চলছিল। ভিড় এতটাই বেশি ছিল যে, রেললাইনের ওপরে উঠে অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করেন অনেকে। এ সময় রাবণের কুশপুতুলে দাহের সময় বাজির শব্দে কোনো অন্য আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না। এ কারণে ট্রেনের হুইসেল কেউ শুনতে পাননি। ফলে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ওপর দিয়ে চলে যায়।

এতে শিশুসহ অন্তত ৬১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ৭৪ জন। এ অনুষ্ঠানে নভজ্যোত সিংহ সিধুর স্ত্রী নভজ্যোত কউর সিধু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

দুর্ঘটনার পরই রেলের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, আহতদের সমস্ত চিকিৎসার ভার নেয়া হবে। এছাড়া নিহতদের পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের জন্য এক লাখ এবং অল্প চোট-আঘাত যাদের লেগেছে, তাদেরকে দেয়া হবে ৫০ হাজার টাকা।

এদিকে পাঞ্জাব সরকারের মন্ত্রী ও প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার নভজ্যোত সিংহ সিধু ঘোষণা দিয়েছেন, অমৃতসরের রেল দুর্ঘটনায় স্বজনহারা সব শিশুকে দত্তক নেবেন। সোমবার অমৃতসরের রেল দুর্ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এ ঘটনায় পাঞ্জাব সরকার অমৃতসরে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় সোমবার হতাহত ২১ পরিবারকে পাঁচ লাখ করে আর্থিক সহায়তা করেছে। প্রথম পর্যায়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহত ২১ পরিবারকে পাঁচ লাখ করে মোট ১ কোটি ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ব্রাহ্মণ মহিন্দ্র বলেছেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে বাকি পরিবারকেও এ সহায়তা দেয়া হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার