৩ বছর আইএসের ডেরায়, কি ঘটেছিল তার জীবনে?

২ বছর ৮ মাস ৬ দিনের প্রতিটা দিনের হিসাব বলে দিলেন লায়লা তালো খুদের আলালি নামের এক ইয়াজিদি নারী। সেসব কথা ভুলবেনই বা কী করে? ধর্ষণ, মারধর, লাঞ্ছনা, যৌনদাসী হয়ে থাকার বীভৎসতা প্রতি নিঃশ্বাসে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে হারমোনি ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে একটি পুরস্কার নিতে এসেছিলেন লায়লা। সেখানেই নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন।

লায়লা জানান, অাগস্টের রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল সেটি। প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাত্যহিক কাজ সেরে পরিবারের সঙ্গে খাবার খাচ্ছিলেন। অবশ্য তার কয়েক দিন আগে থেকেই সিনজারে বহু অচেনা-অজানা মানুষের আাগোনায় সরগরম ছিল।

কারও হাতে পিস্তল, কারও হাতে রাইফেল। মাঝে মধ্যে গুলির শব্দ। হঠাৎ করেই একদিনের মধ্যে সব পাল্টে গেল। ইয়াজিদি নারীদের ধরে ধরে বন্দি করা হচ্ছিল। নির্বিচারে খুন করা হচ্ছিল একের পর এক পরিবারকে। তার মাঝেই স্বামী, দুই সন্তান এবং কয়েকজন আত্মীয়র সঙ্গে পালাতে পেরেছিলেন লায়লা। তার পরিবারের ১৯ জন সদস্যকে বন্দি করে খুন করে আইএস। এদের মধ্যে তার মা, ভাই-বোনরাও ছিল।

জঙ্গিরা যখন ইরাকের কুর্দিস্তানের কোচো জেলায় প্রবেশ করে তখন লায়লার বয়স ছিল ২৬ বছর। জঙ্গিদের হামলায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান লায়লা। এর পর চলতে থাকে অমানবিক অত্যাচার। ২ বছর ৮ মাসের মধ্যে তাকে ৯ বার কেনাবেচা করে বিভিন্ন দেশের জঙ্গিরা।

সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, বাগদাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী শিবিরে দিনের পর দিন ধর্ষিতা হয়েছেন লায়লা। তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক পরে তাকে আবারও বিক্রি করার কথা ছিল। এভাবে বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসবাদী শিবিরে হাত বদল হয়েছেন তিনি।

সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, হিংস্র পশুর মতো আমাকে ছিঁড়ে খেয়েছে। তবে আমি সাহস হারাইনি। শুধু সুযোগ খুঁজছিলাম পালানোর। অবশেষে সেই সুযোগ মিলল। কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের পাঠানো বাইকার গ্যাংয়ের সাহায্যে সন্ত্রাসবাদী শিবির থেকে পালাই আমি। তারপর বহু চেষ্টা করে সন্তানদের খুঁজে বের করি। তবে এখনও স্বামী এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের কোনও খোঁজ পাইনি।

পরিসংখ্যান বলছে, ৬ হাজার ৪শ ১৭ জন ইয়াজিদি নারী আইএস জঙ্গিদের কাছে যৌনদাসী হয়ে বন্দি ছিল। যাদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার নারীকে মুক্ত করা গেছে। এখনও ৩ হাজার ৪শ ১০ জন বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। লায়লার জীবনে এখন একমাত্র লক্ষ্য এদের প্রত্যেককে জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত করা। লায়লা বলেন, যতদিন একজন নারীও ওদের কাছে বন্দি থাকবে, ততদিন আমরা সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাব তাদের মুক্ত করার। আমি সমস্ত আন্তর্জাতিক শক্তিকে আবেদন করছি, তারা যেন এ কাজে এগিয়ে আসেন।