৬ মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার ৭৩১ নারী ও শিশু

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন নারী ও শিশু। যাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। ১৪টি জাতীয় দৈনিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।

মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়েশা খানম জানান, গতবছর সারাদেশে ৯শ’ ৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় ৬৩ জন নারী ও শিশুকে। অর্থাৎ, গতবছর যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে তার অর্ধেক সময়ে এবছর ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দুই হাজার ৮৩ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৩ জনকে।

এছাড়া বিভিন্ন কারণে এই সময়ে ২৭৬ জন নারী ও মেয়ে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১০ জনকে। শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ৫৪ জন নারী ও শিশু। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭০ জন। আর এ সময়ে মারধরের শিকার হয়েছেন ১৪৭ জন।

যৌতুকের কারণেও বড় সংখ্যক নারী নির্যাতনের শিকার হয় বলে সম্মেলনে জানানো হয়। তথ্য বলছে, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯৪ জন। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৪৭ জনকে। এতে আরও জানানো হয়, এসব নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনায় মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ষণ আইনের সংশোধন ও সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যরা যাতেএ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে থাকে। তবে এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সকল প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়ন রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাসহ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ৩২টি সুপারিশ করা হয়।

সম্মেলনে সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, লিগ্যাল এইডের পরিচালক মাকসুদা আক্তারসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।