৯৫ বছর বয়সেও যুবক!

আরিফ মাহমুদ : ৯৫ বছর বয়সেও যেন পুরো যৌবন! এ বয়সেও যুবকের মতো খেঁটে-খেয়ে যাচ্ছেন তিনি। শারীরিক গঠনও বেশ বলিষ্ঠ। দেখলে বোঝার উপায় নেই তিনি প্রায় শতবর্ষী। দেদারছে ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন এখনো। এমনই একজন ব্যক্তি সোনা গাজী। এলাকার অনেকে তাকে ‘ঘেনা’ নামেই চেনে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামের মৃত ফকির চাঁন গাজীর ছেলে সোনা গাজী ওরফে ঘেনার বয়স বর্তমানে ৯৫বছর। হিজলদী গ্রামের পূর্ব পাড়া ব্রিজ এলাকায় বসবাস তাঁর। অত্যন্ত গরীব ও অসহায় এ ব্যক্তির সাড়ে ৩ শতক ভিটেবাড়ি ছাড়া কোন জমি নেই। নেই কোন উল্লেখযোগ্য সম্পদও। তাতে কী? গত ৫০ বছর যাবত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। আগে পায়ে চালানো ভ্যানে রোজগার করতেন, গত ৫/৬ মাস আগে ঋন নিয়ে সেই ভ্যানে ব্যাটারি-মোটর লাগিয়েছেন। তাই ভ্যান চালাতে এখন একটু কম কষ্ট হয়। প্রতিদিন ১’শ থেকে আড়াই শ’ টাকা ইনকাম করেন তিনি। রয়েছে স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেদের আলাদা সংসার করে দিয়েছেন। তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি নাতি-পুতিদের সাথে খুনসুটি করে সময় কাটে বুড়ো-বুড়ির। খাওয়া দাওয়া চলে ছোট ছেলের সংসারে। -এমনটাই জানালেন বয়সের সেঞ্চুরির কাছে পৌছুনো সোনা গাজী ঘেনা।

তিনি জানান- ‘ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল দেখে এখন শেষ বয়সে স্বাধীন বাংলাদেশে আছি।’

স্বাধীনতার কথা বলতেই চোখ ছলছল করে উঠলো সোনা গাজীর। তিনি জানান- ‘আমি ও আতিয়ার (মারা গেছে) ৭১-এ মুক্তিফৌজদের গুলি বহন করেছি, খাবার-দাবার বহন করেছি, বন্দুকও বহন করেছি। তবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠানো হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বিভিন্ন এলাকায়ও গেছি। এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, ফরিদপুর, নয়াগ্রাম, দোয়ানিগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মুক্তিফৌজদের সাথে থেকে তাদের সহযোগিতা করেছি।’

ভ্যান চালাতে চালাতে আক্ষেপ করে ঘেনা জানান- ‘আমি বয়স্ক ভাতা পেয়েছি। তবে শুনেছি সরকার আরো অনেক সহযোগিতা করে। যদি কোন সহযোগিতা পেতাম তবে সুবিধে হতো।’

নিজের পরিবারের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান- ‘আমার ৪ ছেলে বাছির, গফুর, রহিম ও রাজীব সকলেরই আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ৩ মেয়ে হাসিনা, তানজিলা ও আনজুয়ারা, তাদের বিয়ে দিয়েছি। আমার কোন ফসলী জমি নেই। ছেলেরা ‘জন মজুরি’ দিয়ে (কামলা বা শ্রম দিয়ে) ও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়।’

তবে তাঁর কোন আক্ষেপ নেই। জানালেন আল্লাহ ভালো-ই রেখেছেন। শরীর মাঝে মধ্যে একটু খারাপ করলেও শারীরিক শক্তি যেন কমেনি এতটুকুও।

সোনা গাজী ঘেনার প্রতি রইলো শুভ কামনা। বৃদ্ধ বয়সেও মনের যৌবনে উজ্জ্বীবিত এ মানুষটির প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।