অনলাইন গেমের কাছে গো-হারা হেরেছে অলিম্পিক, ফিফা বিশ্বকাপ!
ভারতেও ব্লু-হোয়েল গেম খেলার মারণ নেশায় প্রাণ গেছে অনেক যুবকের! যদিও এর সত্যতা এখনও চূড়ান্ত ভাবে প্রমাণ করা না যায়নি। তবে যে ভাবে ভারতে বাড়ছে মোবাইল গেম -এর বাজার , তাতে এর অঙ্কের খাতা খুলে বসলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
বোঝার সুবিধার্থে একটা রূপকের আশ্রয় নেওয়া যাক৷ আগামী বছর একই সঙ্গে রয়েছে কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়াড৷ তার প্রস্ত্ততিতে চলতি বছর খেলাধূলায় কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ ২০১৬ -র তুলনায় ৩৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ ,৯৪৩ কোটি টাকা৷ সেখানে , ২০১৬ সালে ভারতে অনলাইন গেমিং মার্কেটের পরিমাণই ছিল আনুমানিক ২,৩৪০ কোটি টাকা৷ ভারতে সস্তার স্মার্টফোনের বাড়বাড়ন্ত৷ পাশাপাশি গ্রাহকদের আরও সস্তায় দেদার ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার জন্য মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের আকচাআকচিতে বাজার তুঙ্গে উঠছে।
স্মার্টফোনের ওয়্যারেবল ডিভাইসে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এসে গেমসের আকর্ষণকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ গুগল ইন্ডিয়া ও কেপিএমজি -র সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে , বর্তমানে ভারতে স্মার্টফোনে খেলা মোবাইল গেমের ১ ,৩৯১ কোটি টাকার বাজার -সহ সমগ্রিক অনলাইন গেমের বাজার বাত্সরিক ২০% হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৬,৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে৷ গত বছর ভারতে ইউনিক গেমার হিসেবে চিহ্নিত করা গিয়েছে ১২ কোটিকে৷ ২০২১ -এ এই সংখ্যাটা বেড়ে পৌঁছে যেতে পারে ৩১ কোটিতে৷ নেট দুনিয়ায় ক্র্যাশল্যান্ড , জিওমেট্রি ওয়ার্স-৩ বা পোকেমন গো -র ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ভারতেও যে বড় থাবা বসাচ্ছে , তারও প্রমাণ মিলেছে একটি সমীক্ষায়৷ যেখানে দেখা গিয়েছে , ভারতে ১৬ -৪৫ বছর বয়সী মোবাইল গেমারদের সংখ্যা ২০১৫ সালের থেকে ২০১৬ সালে ১১৭ % বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ভারতে এখন খেলার দুনিয়ায় সবথেকে বড় ব্র্যান্ড ক্রিকেটের আইপিএল৷ গত বছরের থেকে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালের আইপিএলের ব্র্যান্ড ভ্যালু পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকায়৷ এর পাশাপাশি , মেসি -রোনাল্ডোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নেহাতই শিশু৷ ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী , ব্র্যান্ড ভ্যালুর হিসেবে মহার্ঘতম টুর্নামেন্টের তালিকায় তারা রয়েছে আট নম্বরে৷ প্রথম তিনে থাকা মার্কিন সুপার বোল , রিও অলিম্পিক এবং শেষ ফিফা বিশ্বকাপ মিলিয়ে ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়াচ্ছে ৬,২৭৩ কোটি টাকা৷ ২০১৬ সালে আয়ের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ৩ ফুটবল ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড , রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার স্পনসরশিপের অঙ্ক ছিল মাত্র ৪ ,৩৯১ কোটি টাকা৷ সেখানে আয়ের দিক থেকে বিশ্বের প্রথম তিন অনলাইন গেমিং সংস্থার ২০১৬ সালেই আয় ছিল ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার কাছাকাছি৷ বাত্সরিক গড় বৃদ্ধির হার ১৩ %৷ প্রথম ২৫ ধরলে এই অঙ্কটি পৌঁছে যাবে ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার কোটি টাকার অবিশ্বাস্য অঙ্কে ! সহজেই অনুমান করা যায় , কোন গতিতে এগোচ্ছে নেট -গেমিংয়ের দুনিয়া।
এইসব কষ্টকল্পিত অঙ্কে ভারতের অবদান কিন্ত্ত কম নয়৷ বিশ্বের নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , চীন , ব্রাজিল , রাশিয়ার পরেই পাঁচ নম্বরে রয়েছে ভারতবর্ষ৷ বিশ্বের ১৬ % আয় উত্পন্ন হচ্ছে দেশের মাটিতেই৷ ভারতে সর্বাধিক জনপ্রিয় (ডাউনলোডের ভিত্তিতে ) প্রথম পাঁচটি অনলাইন গেম (ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা , সাবওয়ে সার্ফার্স, টেম্পল রান ২, ট্রেন সিম্যুলেটর ২০১৬ এবং ডুডল আর্মি-২) প্রতিদিন কখনও না কখনও খেলেন প্রায় ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ মানুষ৷ গ্লোবাল গেমস মার্কেট রিপোর্টের সমীক্ষা বলছে , মোবাইল গেমের বাজারে ৪২ % টাকাই আসছে স্মার্টফোনের হাত ধরে৷ এরপরে ট্যাবলেটকে ধরলে যা ৪৬ % তে পৌঁছে যায়৷ আগামী ৪ বছরে ওই পরিমাণ ৫০ % বেড়া টপকে যাবে৷ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে , আক্ষরিক অর্থেই মোবাইল হয়ে পড়েছে গেমসের দুনিয়া। সুদীপ্ত তরফদার, এই সময়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন