অনাবৃষ্টি! আমন ও পাট জাগে জরাজীর্ণ অবস্থা পঞ্চগড়ে
বর্ষার এই শ্রাবণ মাসের শুরুতে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও আর বৃষ্টির দেখা নেই পঞ্চগড়ে। প্রচÐ রোদ আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মধ্যে। ফলে এই বৃষ্টিপাতে কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। এতে করে পঞ্চগড়ের সর্বত্রই খরায় পুড়ছে ফসলের মাঠ। বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা উঁচু জমিগুলোতে আমন চারা লাগাতে পারছেন না। আর যারা আগেই আমনের চারা রোপণ করেছেন সেগুলোও প্রচণ্ড দাবদাহে শুকিয়ে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড তাপের কারণে লোকজনও বাইরে বেরুতে পারছেন না।
জেলার সদর, আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে শ্যালো ও মোটর চালিয়ে জমিতে পানি দিচ্ছেন এবং আমনের চারা রোপণ করছেন। বৃষ্টির পানিতে লাগানো আগাম আমন খেত পানির অভাবে চুপসে যাচ্ছে। ফলে আমন আবাদ ও পাট জাগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে পাট কেটে রেখে দিয়েছেন কৃষক, পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না। জেলার আটোয়ারী উপজেলার ১০ নং গড়িনাপাড়া ইউনিয়নের ফুটকিবাড়ি ধনিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরজামান বলেন, নিচু জমিগুলোতে আমনের চারা রোপণের পর উঁচু জমিতে বৃষ্টির অভাবে চারা লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। জলাশয় সংকট ও পানি সমস্যার কারণে পাট জাগ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ৫ন বুড়বুড়ি ইউনিয়নের কালদাসপাড়া গ্রামের পাট চাষি মফিজুল হক বলেন, আমরা মূলত পাট চাষ করে থাকি জ্বালানির পাটখড়ির জন্য। কারণ আমাদের এলাকার পাটের মান ভালো না।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউপির কৃষক নেজারউদ্দিন জানান, শ্রাবণ মাস আসলে জমিতে বৃষ্টির পানি থইথই করে। শ্রাবণ মাসের কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হলে এখনও বৃষ্টি নেই। তাই এবার পানির অভাবে জমি ফেটে গেলেও এখন পর্যন্ত বৃষ্টির পানির দেখা পাই নাই। এভাবে যদি চলে তাহলে তো জমি পড়ে থাকবে। যারা চারা রোপন করেছে তাদের ধানও ভালো হবে না। চারা যে লাগাবো সেই পানিও দিতে হচ্ছে সেচ পাম্প দিয়ে। চাষের ব্যয় বাড়ছে তাতে।
কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকালে ঠিকমত বৃষ্টির দেখা মিলছে না। তাই সেচযন্ত্র ব্যবহার করে কৃষকদের আমন চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমন চারা রোপণের কাজ শেষ হবে। জানা যায়, পঞ্চগড় জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপণ করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসূমের শুরুতেই কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারা রোপণের কাজ শুরু করে জেলার কৃষকরা। ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমিতে চারা রোপনের কাজও শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে পাট ক্ষেত ও অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি। ঠিকমত একবার ভারী বৃষ্টি হলেই তারা চারা রোপনের কাজ শেষ করতে পারবে। পঞ্চগড় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বর্ষা মৌসূমে জেলায় উফসী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ধান সহ সব মিলিয়ে ৯৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯০ হাজার ৬শ ৪০ হেক্টর জমিতে চারা রোপনের কাজ শেষ হয়েছে।
ভরা বর্ষায় বৃষ্টিপাত লুকোচুরি করায় নদ-নদী, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে গেছে। বর্ষার পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যারা আমনের জমি আবাদ করেছেন তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তারা কোথাও পানি পাচ্ছেন না। এতে আগাম লাগানো ধানের খেতগুলো পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা ফসল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এবং সেইসঙ্গে কৃষি বিভাগের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ৯১ শতাংশ জমিতে আমন চারা রোপনের কাজ শেষ হয়েছে। আর দু’একদিন ভরী বৃষ্টি হলেই আমন চারা রোপনের কাজ শেষ হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন