অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্য জালিয়াতি করে সিম কিনছে অপরাধীরা
অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্য জালিয়াতি করে সিম কিনছে অপরাধীরা। ফলে অপরাধকাণ্ডে এসব সিম ব্যবহার করেও তারা থাকছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মোবাইল কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা একটি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে নতুন সিম নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। সিআইডি তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে সিম বিক্রির অভিযোগে দু’জনকে আটকের পর বিষয়টি জানতে পারে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, একজন গ্রাহক তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের বিপরীতে ১৫টি সিম নিতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই পাঁচটির বেশি সিম উত্তোলন করেন না। এ সুযোগে অপরাধীরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সিম জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করছে। অপরাধীরা অপারেটর কোম্পানির কিছু অসাদু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নতুন সিম কিনছেন। ফলে অপরাধীদের সিম ট্র্যাক করে গ্রেফতার করা হলেও ভোগান্তিতে পড়ছে নিরীহ মানুষ। পাশাপাশি বিপাকে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি এলাকার এক গ্রাহকের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয় জালিয়াত চক্র। ঘটনার পর গত ১৩ জুলাই বালিয়াকান্দি থানায় ১৭০, ৪২০ ও ৪০৬ (পেনাল কোড) ধারায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় উঠে আসে নতুন সিম উত্তোলন ও বিকাশে প্রতারণার বিষয়।
বিষয়টি তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্তে দেখা যায়, যার নামে সিম নিবন্ধিত, তিনি সেই সিম কখনও ব্যবহার করেননি। অর্থাৎ একজনের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে অন্য জেলা বা বিভাগের গ্রাহক। বিষয়টি নিয়ে তখন আরও তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
তদন্তে মোবাইল অপারেটর রবি, টেলিটকের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে সিম বিক্রির অভিযোগের সত্যতা মেলে। রোবাবর রাতে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাজীব ফারহানের নেতৃত্বে রংপুরে বিশেষ অভিযান চালায় আট সদস্যের একটি দল। এ সময় জালিয়াতির মাধ্যমে সিম বিক্রির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হাতেনাতে দুজনকে আটক করে সিআইডি।
আটককৃতরা হলেন, টেলিটক কাস্টমার কেয়ার সুপারভাইজার আহম্মেদ জাহিদ আনোয়ার (৩০) ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কম্পিউটার অপারেটর মো. মাহমুদুল হাসান মামুন (৩০)। এ সময় পালিয়ে যায় রানা নামে রবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
জাহিদ আনোয়ারের কাছ থেকে সাড়ে ছয়শ’ এবং মামুনের কাছ থেকে ৫০০ সিম জব্দ করা হয়। জব্দ সিমের মধ্যে টেলিটক ও রবি ছাড়াও প্রত্যেকটি অপারেটরের বায়োমেট্রিক সিম রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাজীব ফারহান বলেন, বিকাশ জালিয়াতিসহ বেশ কটি ঘটনায় মোবাইল সিমের তথ্য ধরে অপরাধীদের ধরতে বিপাকে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। তথ্য জালিয়াতির কারণে অপরাধীরা অধরায় থেকে গেছে। অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটকের পর উদ্বেগজনক তথ্য উঠে আসে।
তিনি বলেন, একটি চক্র বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ক’জন অসাদু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্যে নতুন সিম তুলে তা বিক্রি করছে অপরাধীদের কাছে। এজন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
রাজিব ফারহান বলেন, তারা মূলত : রংপুরের মতো বিভাগীয় শহরে বসে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারের মাধ্যমে সিম পৌঁছে দিচ্ছে। জাহিদ গত একবছর ধরে এ কাজ করে আসছে। এসব সিম কোনো কাগজ ছাড়াই বিভিন্ন দোকান থেকে কেনা যায়। এমনকি রাজধানীতেও নিয়মিত এ সিম চালান করে তারা।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া অন্য গ্রাহকের বায়োমেট্রিক সিমের তথ্য কারো জানার কথা না। বায়োমেট্রিক সিমের তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয়। কিন্তু তা যদি গোপনই না থাকে এবং গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে সেসব তথ্য পাচার ও বিক্রি হয় তাহলে এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি মোবাইল অপারেটরের উচিত নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি রাখা।
আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও বেশ কয়েকজন অসাদু কর্মকর্তা ও প্রতারক চক্রের নাম উঠে আসছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কমিউনিকেশন অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। রানা নামে কেউ রবিতে কাজ করেন না। রানা নামে একজন রংপুরে সিম ডিস্ট্রিবিটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। তিনি পালাননি। সূত্র : জাগো নিউজ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন