অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতনে অভিযুক্ত মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপক্ষে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা সফররত দেশটির উপ-সহকারী মন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়।

গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলবিষয়ক বক্তব্যের পর এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী মন্ত্রী ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লাম এসব কথা বলেন।

ড্যানিয়েল বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনের শাসনবিধি ও মৌলিক আন্তর্জাতিক নিয়মের জন্য আঞ্চলিক প্রতিশ্রুতি। একটি নিরাপদ এবং স্থায়ী আঞ্চলিক পরিবেশ স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে যা মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে পৌঁছে দেয়।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখতে আন্তর্জাতিক আইন সবারই মেনে চলা উচিত। বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে নিয়েছে চীনও যেন দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন ট্রাইবুনালে ২০১৬ সালের রায় মেনে নেয়।

ড্যানিয়েল রোজেনব্লাম বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানুষকে দারিদ্র্যমুক্তির একটি দুর্দান্ত সফলতার গল্প। এরপরও আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

এ অঞ্চল পৃথিবীর অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলের একটি। আসিয়ানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সেখানে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বিশ্ব বাণিজ্যের ২৫ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ। বৃহত্তর আঞ্চলিক যোগাযোগের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগতভাবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারত বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের তিন শতাংশেরও কম রফতানি ভারতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে পৌঁছায়।

তিনি আরো বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বলতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে বুঝি। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা ও অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করে এই অঞ্চল। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার, দাতা এবং বিনিয়োগকারীও।

সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি দেশের সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এ অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের সাথে অন্য মিত্র দেশগুলোর মতো দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে ড্যানিয়েল বলেন, আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক সংযোগ বিস্তার করা। সেতু, রাস্তা, বিমান এবং সামুদ্রিক বন্দর ছাড়া যেকোনো দেশের জন্য সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অর্জন প্রায় অসম্ভব। আমরা সকলের উন্নয়ন ও সুযোগ তৈরিতে এই বিশাল অঞ্চলকে একসঙ্গে জড়িত করতে চাই তবে এজন্য অংশীদারদের জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

জিএসপি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটকে জবাব দিতে আহ্বান জানান। এ সময় বার্নিকাট বলেন, জিএসপি হলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য দেয়া মার্কিন বাণিজ্য সুবিধা। কিন্তু বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশের কাতারে চলে আসায় স্বাভাবিকভাবেই আর জিএসপি সুবিধা পাবে না।