আওয়ামী লীগের জোটের আহ্বানে সিপিবির ‘না’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়তে চায় আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের খোলাখুলিই বলেছেন সে কথা। তবে রাজি নন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম। বলেছেন, কোনো সম্ভাবনাই নেই।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-দুই পক্ষই তাদের জোটের আকার বাড়াতে চায়। এ জন্য আলোচনাও চলছে।
আওয়ামী লীগ যাদেরকে জোটে নিতে চায় তাদের মধ্যে আছে বামপন্থীরা। ২ অক্টোবর রাজধানীতে এক আলোচনায় সে আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, ‘আজকে একটা বিষয় ভালো লাগছে, বামপন্থীরা এক সুরে কথা বলছে। সেটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আমরা নেই। এই উচ্চারণ অনেকেই করেছে। তাহলে এই উচ্চারণ যারা করেছেন- আসুন না, আমরা মিনিমাম পয়েন্টে ম্যাক্সিমাম ইউনিটি গড়ে ফেলি।’
সিপিবির নেতৃত্বে আট দলের জোটের অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছেন জানিয়ে কাদের আরও বলেন, ‘তাদের আদর্শের প্রতি আমার কোনও অশ্রদ্ধা নেই। আসুন মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এই প্রশ্নে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’
তবে সরকারি দলের সাথে বামপন্থীদের নিয়ে জোট তৈরির কোনো সুযোগ নেই বলে ঢাকাটাইমসকে বলেছেন সিপিবির সভাপতি সেলিম। বলেছেন, ‘বর্তমানে আওয়ামী লীগ শাসন, দুঃশাসনে রূপ নিয়েছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ কমিউনিস্ট পার্টি থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। এরকম একটা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাথে সিপিবির কোনো জোট গঠন তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগ এটা অসম্ভব করে তুলেছে।’
আওয়ামী লীগ ও সিপিবির মধ্যে নীতি ও আদর্শগত কিছু মিল রয়েছে। আওয়ামী লীগ যেমন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, তেমনি সিপিবিরও ভূমিকা ছিল এই যুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুটি দল ছিল ঘনিষ্ঠ। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সিপিবি সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে সমর্থন দেয়ায় দল দুটির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সিপিবি জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করে। যদিও পরে আর জোট করেনি তারা।
তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের শাসনের কঠোর সমালোচক সিপিবি। গত ১০ বছরে দেশ ধনিক শ্রেণির উত্থানকে ভালো চোখে দেখছে না বামপন্থী দলটি। তাদের দাবি, সরকার এই শ্রেণিতে সহযোগিতা করছে। এর ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য প্রকট হচ্ছে।
আবার ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের পাশাপাশি বর্জন করেছে সিপিবিও। আর এই ভোটের আগে বিএনপির সঙ্গে জোটের আলোচনাও চালিয়েছে দলটি। যদিও সেলিম সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াত ছাড়ার শর্ত দিয়েছিলেন।
সিপিবি গত কয়েক বছর ধরেই বিকল্প বাম শক্তি গঠনের চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে আটটি ছোট ছোট বাম দল মিলে জোটও করেছে।
সিপিবি সভাপতি বলেন, “আওয়ামী লীগ তার নীতির পরিবর্তন করে ‘রাইট আপ সেন্টার’ থেকে এখন ‘রিএকশনের পজিশন’ নিয়ে নিয়েছে। মধ্যবিত্ত পার্টি থেকে লুটেরা ধনিকের নেতৃত্বে দলে পরিনত হয়েছে।‘
আওয়ামী লীগে আপত্তি কী- জানতে চাইলে সিপিবি নেতা কওমি মাদ্রসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ায় আপত্তির কথা জানান। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন হেফাজতের সাথে ঐক্য করছে, ইসলাম পছন্দ দল হিসেবে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করছে। তারা সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু হয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে বসে আছে এবং হরণ করে চলেছে। আমরা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’
সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি বা অন্য কারও সঙ্গেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জোটে যাবেন না তারা।
‘আমরা এই দুইটার (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) বাইরে বিকল্প গড়ে তুলতে চাই। বিকল্পের পক্ষে যারা আছে তাদের সঙ্গের সংগ্রামের কাফেলায় আমাদের ঐক্য, আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠবে।’
সিপিবির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঐক্যের বিরোধী। বলেন, ‘সরকারি দল তাদের জবরদস্তি শাসন অব্যাহত রেখেছে। একই সাথে তাদের জোট তৈরি ও ঐক্যের সম্প্রসারণ জনগণকে নতুন কিছু দেবে না।’
তবে রাজনীতিতে এক ধরনের সমঝোতায় আগ্রহী সাকী। বলেন, ‘বিদ্যমান অবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মধ্যে একটা সামাজিক, রাজনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে যে, আমাদের রাজনীতি কিভাবে চলবে।’
‘এজন্য আমরা বলেছি, কতগুলো সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন, বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করা, নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তনসহ কতগুলো নূন্যতম জাতীয় অঙ্গীকার দরকার। সেটার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন করে একটা রাজনতিক অবস্থায় পৌঁছাতে পারি। এজন্য সমঝোতা দরকার। এটার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন