আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে যে পাতা
শিরোনাম দেখেই হয়তো ঘাবড়ে গেছেন অনেকেই। ঘাবড়ানোর কথাও। এ কেমন পাতা, যা মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে? ঘটনা কিন্তু মিথ্যে নয়। বিশেষ এক লতা বা গুল্মের পাতা শরীরে লাগলে অস্থিরতা বা যন্ত্রণা থেকেই ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। আসুন জেনে নেই সেই পাতার রহস্য-
অবস্থান
অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গরাজ্য কুইন্সল্যান্ডের একটি রেইন ফরেস্টে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এ লতা বা গুল্ম। সবুজের সমারোহে অসম্ভব সুন্দর এই বনে এই লতার জন্যই বেশ দুর্নাম রয়েছে।
পরিচয়
এটিকে এক ধরনের গাছ বলা হলেও মূলত কোন গাছ নয়। এটি আসলে এক ধরনের গুল্ম বা ঝাড়। এর মূল নাম ‘ডেনড্রোনাইড মোরোইডস’। অনেকে একে ‘যন্ত্রণাদায়ক গাছ’ বা ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী গাছ’ বলে থাকেন। স্থানীয়ভাবে এটি ‘গিম্পি গিম্পি’ নামে বেশি পরিচিত।
প্রচারণা
স্থানীয় লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, একটি ঘোড়া এবং একজন শিকারির মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় ডেনড্রোনাইড মেরোইডসের পাতাকে। শিকারি ওই ঘোড়ায় চড়ে বনের গহীনে গিয়েছিলেন। প্রথমে ঘোড়াটি পাতা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে খাদের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। শেষে শিকারিও নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
পাতার আকৃতি
পাতাগুলো দেখতে অনেকটা হৃদয়াকৃতির। আমাদের পান পাতার সাথে যথেষ্ট মিল রয়েছে। এর চারপাশ ঘিরে থাকে ছোট ছোট হুল বা কাঁটা। ছোট পাতার হুলগুলো সাদা চুলের মতো, যা অনেক সময় খালি চোখে দেখা যায় না।
মূল কারণ
এই হুল বা কাঁটায় এক ধরনের বিষ রয়েছে। এই বিষই মূলত আত্মহত্যার কারণ। সুঁইয়ের মতো দেখতে এই কাঁটা বেশ শক্তিশালী নিউরোটক্সিন ধারণ করে। এই নিউরোটক্সিন হুলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে অসম্ভব ব্যথা হয়। যা ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
কেন এই আত্মহত্যা
কাঁটার বিষ প্রথমে মাংসপেশীতে এবং পরবর্তীতে অস্থিমজ্জায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির এমন ব্যথা সহ্য করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ ব্যথা এমন আকার ধারণ করে যে, যেকোন পশুকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর মানুষের ক্ষেত্রে ব্যথার পরিমাণ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, আক্রান্ত ব্যক্তি মুক্তির উপায় হিসেবে আত্মহত্যাকেই বেছে নেন। তবে এ ধরনের অনুভূতি একমাত্র চরম পর্যায়ে হয়ে থাকে।
গবেষকদের মতে
গবেষকরা মনে করেন, গাছটির পাতাগুলো এতটাই সংবেদনশীল যে নিশ্বাসের সাথেও যদি কোন কারণে এর হুল নাকের ভেতর ঢুকে যায়, তবে সর্দি, র্যাশ, এমনকি নাক থেকে রক্ত পর্যন্ত পড়তে পারে। তারা এ ধরনের শরীরিক যন্ত্রণাকে অ্যাসিডদগ্ধ বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন।
প্রতিকার
তবে এর প্রতিকারও রয়েছে। খুবই সতর্কতার সাথে দক্ষ হাতে হুলগুলো শরীর থেকে বের করে আনতে হয়। কারণ হুল ভেঙে যদি কিছু অংশ শরীরে থেকে যায়, তাহলে ব্যথা কমার সম্ভাবনা থাকে না। হুল যতদিন শরীরে থাকবে, ততদিন ব্যথা থাকবে। এমনকি হুল শুকিয়ে গেলেও ব্যথার প্রকোপ কমে না।
বংশ বৃদ্ধি
লতাগুলো লম্বায় প্রায় চল্লিশ মিটার পর্যন্ত হয়। তবে অধিকাংশ লতাই দেড় মিটারের বেশি হয় না। এতে ফুল এবং ফল হয়। ফলগুলো খুবই ছোট হয়। রং অনেকটা গোলাপি হয়। তবে ফলগুলো খাওয়া যায়। এর ফল কিছুটা মিষ্টি এবং রসালো। প্রতিটি ফলে একটি বিচি থাকে, বিচি থেকে আবার জন্ম হয়।
সতর্কতা
এই বনের প্রচুর পশু-পাখি এই লতার সংস্পর্শে এসে মারা যায়। তাই বর্তমানে এই বনে মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে এর তেমন অস্তিত্ব নেই। দেশটির অন্য কোথাও এটি চাষের প্রতি তেমন আগ্রহও নেই। তাই এ লতাগুলো ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন