আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ মানা বাধ্যতামূলক : হাইকোর্ট
জাতীয় সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিলে আসন শূন্য হওয়াসংক্রান্ত ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আপিল বিভাগ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্টের জন্য তা মানা বাধ্যতামূলক বলে মত দিয়েছে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ।
৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে করা রিট আবেদন জনস্বার্থসংক্রান্ত না হওয়ার দাবি করে তা খারিজ করে দিতে রাষ্ট্রপক্ষ আর্জি জানালে আদালত এ কথা বলে। একইসঙ্গে রিটটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে। অবকাশকালীন ছুটির এক সপ্তাহ পর রিটটি শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।
জাতীয় সংসদে পাসকৃত বিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, ‘বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ সংসদ সদস্যদের একটি দলের (গ্রুপ) হাতে। এ ব্যবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার স্বাধীনতা নেই কোনো সংসদ সদস্যের। এমনকি তার দল যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা নিদের্শনা দেয় তাহলেও তার বিরুদ্ধে ভোট বা মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। তারা দলের নীতি নির্ধারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। ৭০ অনুচ্ছেদ বলবৎ থাকাবস্থায় বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে গেলে একজন বিচারককে দলীয় নীতিনির্ধারকের করুণা অনুযায়ী চলতে হবে।’
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড. ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
শুনানির শুরুতেই আদালত রিট আবেদনকারী ইউনুছ আলী আকন্দকে বলেন, ‘আপনাকে ষোড়শ সংশোধনীর রায় দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আপনি সেটা দেননি।’
জবাবে ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘রায় পাইনি। তাই একটি সম্পূরক আবেদন দিয়েছি। এতে রায়ের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। আদালত বলেছেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আমরা যে অভিমত দিয়েছি তা আপিল বিভাগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আপনি সেটা এ আবেদনে সঠিকভাবে তুলে ধরেননি। এ আবেদন সংশোধন করতে হবে।’
এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু রিট আবেদনটি খারিজ করার আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘এটা জনস্বার্থমূলক রিট আবেদন নয়। জনস্বার্থমূলক মামলার বিষয়ে আপিল বিভাগ যে গাইডলাইন দিয়েছেন তাতে এটা পড়ে না। তাই এ রিট চলতে পারে না। রিট আবেদনকারী আপিল বিভাগের রায় নিয়ে মিস কোড করেছেন। তাকে জরিমানা করে রিট খারিজ করা হোক।’
এরপর আদালত বলেন, আপিল বিভাগ যে মত (ফাইন্ডিংস) দিয়েছেন তা আমাদের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। এজন্য এ রিটের ওপর শুনানি করা যায়।
এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এভাবে যদি যেকোনো বিষয় আদালতে চলে আসে আর আদালত যদি তা গ্রহণ করেন তবে তা নিয়ে বিচার বিভাগ, আইন প্রণয়ন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগের মধ্যে আরও দ্বন্দ্ব বেড়ে যেতে পারে।
এরপর আদালত শুনানি মুলতবি করেন এবং অবকাশকালীন ছুটির এক সপ্তাহ পর রিটটি শুনানির দিন ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ যেখানে জাতীয় সংসদে স্বাধীন ভোটাধিকার সীমিত করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদটি সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও আইন সচিবকে বিবাদী করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন