আবাসিক হোটেলের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী
সম্প্রতি ইউটিউবে ‘আবাসিক হোটেল’নামে একটি ওয়েব সিরিজের প্রমো আপলোড করা হয়। আপলোডের ডাবল মিনিং সব ডায়লগস এবং অশ্লীল দৃশ্যের কারণে বেশ সমালোচিত হয়। পরে ‘আবাসিক হোটেল’এর সংশ্লিষ্ট এবং অন্য অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী এই লেখা দেখে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং তা লিখতে অনুরোধ জানান গণমাধ্যম কর্মীদের।
‘আবাসিক হোটেল’এর অভিনেত্রী ‘কাজল সুবর্ণ’র বক্তব্য তুলে দেয়া হলো-
গত ঈদে ইমরাউল রাফাতের আরেকটি কাজ করেছিলাম আমি। ‘ঘুড্ডি’নামের নাটকটা গত রোজার ঈদে বৈশাখী টিভিতে প্রচার হয়েছিল। তারপর একদিন মাসখানেক পর আমার একটা ডেট চাইলেন। আমি দিলাম। উনি বললেন- ‘ওকে ঐ ডেটটা কাউকে দিও না। একটা ঈদের কাজ করবো, ওখানে তুমি মেইন ক্যারেক্টার করবা’।
আমিতো মহা খুশি। কারণ ঈদের বিশেষ নাটকগুলোতে মেইন ক্যারেক্টার পাওয়া খুবই টাফ। ‘ঘুড্ডি’তে যেমন আমার মাত্র ৫টা সিকোয়েন্স ছিল। সো আমি এক্সাইটেড ছিলাম। তখনো আমি জানতাম না এটা টিভিতে যাবে না।
আমি ওনার সাথে আগের কাজ যখন করলাম, তখনই দেখেছি ওনারা স্ক্রিপ্ট দেন না। অন দ্য স্পট একটা কাগজ ধরিয়ে দেন অথবা বলে দেন যে এইটা বলতে হবে। এই হবে ডায়ালগ, এই হবে এক্সপ্রেশন। এটা জেনেও আমি বলেছি ভাইয়া স্ক্রিপ্ট কি পাওয়া যাবে?
অথবা গল্পটা যদি বলেন আমার জন্য প্রিপারেশন নিতে সুবিধা হয়। চরিত্রটা সম্পর্কে জানলে আমি আমার কস্টিউমগুলো রেডি করতে পারব আমাকে শুধু বললেন, এই নাটকে আমার চরিত্রটা হচ্ছে একটা একা মেয়ের।
যার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। মেয়েটা একা থাকে। লোনলি ফিল করে। একদিন একটি আবাসিক হোটেলে বেড়াতে যায় সে। সেখানে দু’টি চ্যাংড়া ছেলে তাকে পছন্দ করে। এরপর তার পেছনে লাগে- এইরকম একটা গল্প। এরপর যোগ করলেন- ‘ঈদের নাটকতো, তাই একটু দুষ্টুমি, একটু ফান থাকবে!
আমি জিজ্ঞেস করলাম আমার কস্টিউম কী হবে? ডিরেক্টর বললেন, ‘শাড়ি লাগবে, সাথে অন্তত একটা স্লিভলেস ব্লাউজ নিতে হবে’। আমি ভাবলাম সামারেতো নরমালি আমরা স্লিভলেস পরি। একটা জোগাড় করে নেব।
জানলাম আমার সঙ্গে কো-আর্টিস্ট থাকবে স্পর্শীয়া আপু, তৌসিফ। তাদের নাম শুনে ভাবলাম নিশ্চয়ই ভালো একটা কাজ হবে। তারপর শুটিংয়ে গেলাম আমরা গাজীপুরের সোহাগপল্লী রিসোর্টে। ওখানে রাহা তানহা আপুর সাথে পরিচয় হলো। আমার রুমমেট উনি।
প্রথম সিকোয়েন্সটাতে শাড়ি পরে হেঁটে আসার একটা দৃশ্য ছিল। যেখানে আমাকে দূর থেকে দু’টি ছেলে দেখে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। তাকিয়ে থাকে, আমাকে দেখে যেন পড়েই যাচ্ছে। কিন্তু ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলে বুঝলাম আমার ডায়লগ অথবা অভিনয়ের চেয়ে আমার বডিকেই বেশি শো অফ করা হচ্ছে। তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে জিনিসটা অন্যকিছু হচ্ছে।
আমাদেরকে তখনো স্ক্রিপ্ট দেয়া হয়নি। শুধু দেখলাম শুটিংয়ের সময় বলে দেয়া হচ্ছে যে এইটা গল্প, এরকম করবা, এরকম ডায়লগ বলবা। আমি যখন আবার ডায়লগ দিতে গিয়ে দেখলাম ভাষাগুলো অন্যরকম, তখন আমি ডিরেক্টরকে বললাম ‘আমি এই ডায়লগ দিবো না। আমাকে গল্পটা বলেন এবং আমার স্ক্রিপ্টটা দেন।
অন্য কেউ কিছু বলেনি, আর আমি যেহেতু এগুলো নিয়ে কথা বলেছি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর আসাদ ভাব নিয়ে বললেন – ‘আমরা স্ক্রিপ্ট দিয়ে কাজ করিনা’। তার আগে আরেকটা সিন নেয়ার চেষ্টা করলো। সিনটা এমন যে আমাকে কেউ উঁকি মেরে দেখছে। আমাকে শাড়ির আঁচলটা ছেড়ে দিতে হবে। তারা বললো তুমি করো। আমরা খারাপভাবে দেখাবো না। কিন্তু আমি দেইনি।
আমি তখন আনকম্ফোর্ট্যাবল ফিল করা শুরু করেছি। বাসায় আম্মুর সঙ্গে কথা বললাম। আম্মু বললো বাসায় চলে আসো। কিন্তু এতোদূর থেকে কীভাবে আসবো? আর প্রফেশনালিজমের কারণেও ভাবলাম যতোটুকু সম্ভব কাজটা শেষ করেই যাবো। কিন্তু পরদিন আমাকে শুটিং না করিয়ে শুধু বসিয়ে রাখা হলো। অনেকটা একঘরে টাইপ করে রাখা হলো আমাকে।
তারা সবাই আড্ডা মারে, মজা করে, একসঙ্গে খাচ্ছে, কিন্তু আমাকে কেউ ডাকেনা। আমি সেখানে গেলে তারা সবাই চুপ হয়ে যায়। খুবই অকওয়ার্ড লাগছিল আমার। মনে হচ্ছিলো আমি অন্য ইউনিটের কেউ। আমি তখনো জানতাম না অন্যরা সবাই তাদের শুটিং ঐভাবেই করেছে, ঐ ডায়লগই দিয়েছে।
প্রমোটা যখন দেখলাম তখন মনে হলো, আমি এই ডায়ালগ কখন দিলাম? আমার ডায়লগ ছিল ‘আপনি কি আইসক্রিম খেতে পছন্দ করেন? আইসক্রিমের ফ্লেভার চকলেট, ভ্যানিলা পছন্দ কিনা?’ কিন্তু প্রমোতে ‘আইসক্রিম’শব্দটা বাদ দিয়ে শুধু রাখা হয়েছে ‘চকলেট ভ্যানিলা’, এবং সেটা দিয়ে একটা অশ্লীল ডায়লগ বানিয়ে দেয়া হয়েছে আমার অজান্তেই! প্রমোটা দেখে অবাক আর শকড হয়ে গেছি। এই ডিরেক্টর যে এতো নিম্নমানের কাজ করেন সেটা জানতাম না। তখন জানলে এই কাজটাই করতাম না আমি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন