আমানত রক্ষা মুমিনদের পবিত্র দায়িত্ব
আমানত অর্থ গচ্ছিত রাখা। এটি খিয়ানত এর বিপরীত। সাধারণভাবে কারো কাছে কোন অর্থ – সম্পদ গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত সম্পদের হিফাযত করেন এবং উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে তা ফেরৎ দেন তাকে বলা হয় আল আমিন।
রাসুলে আকরাম (সাঃ) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আমানতদার। আমানতকৃত সম্পদ আমানতদার ব্যবহার করতে পারেন না। টাকা-পয়সা ধন সম্পদ এর মত কথাও আমানত। অনুমতি বাদে তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়া মানে আমানতের খেয়ানত করা। সরকারী সম্পদ যারা রক্ষা করে তারা সে সম্পদের জিম্মাদার। তাদের জিম্মায় থাকা সম্পদ আত্মসাৎ হলে বা কোন ক্ষতি হলে তার জন্য সে দায়ী থাকবে। তবে এক্ষেত্রে তাকে কিছু স্বাধীনতা ও দেয়া যেতে পারে। এব্যাপারে বলা যায় , কুতায়বা ইবনে সাউদ রঃ …আমর (রাঃ )থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, উমর (রাঃ )এর সাদকা সম্পর্কিত লিপিতে ছিল যে , মুতাওয়াল্লাী নিজে ভোগ করলে এবং তার বন্ধু-বান্ধবকে আপ্যায়ণ করালে কোন গুনাহ নেই। যদি মাল সঞ্চয় করার উদ্দেশ্য না থাকে। ইবনে উমর উমর (রাঃ )এর সাদকার মুতাওয়াল্লী ছিলেন। তিনি যখন মক্কাবাসী লোকদের নিকট অবতরণ করতেন তখন তাদেরকে সেখান থেকে উপঢৌকন দিতেন। বিবাদমান পক্ষের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী ফায়সালা করা প্রত্যোক মুমিন-মুসলমানের দায়িত্ব। দায়িত্বপূর্ণ পদ. ধর্মীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় নেতৃত্ব, সৎ ও যোগ্য লোকের হাতে থাকলেই সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সুরা নিসাতে (৫৮) আল্লাহ বলেন, হে মুসলমান! আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদের হাতে ফেরৎ দেবার নির্দেশনা দিচ্ছেন। আর লোকদের মধ্যে ফায়সালা করার সময় “ আদল” ও ন্যায়নীতি সহকারে ফায়সালা করো।
সন্তান- সন্ততিও আমানত। আল্লাহ যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাদের সাথে থাকে। তাই যাদেরকে আল্লাহ সন্তান সন্ততি দিয়েছেন তাদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। এছাড়া তাদেরকে সঠিকভাবে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা আমাদের কর্তব্য।সম্পদ বন্টনে মুমিন ব্যক্তিকে অবশ্যই ন্যয্যতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে সন্তানদের মধ্যে সম্পদ বন্টন ও সুযোগ সুবিধা প্রদানে ন্যয্যতা অবলম্বন করা উচিত। রাসুলে আকরাম (সাঃ) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আমানতদার। একটি ঘটনায় জানা যায়- ইয়ামেন থেকে আলী (রাঃ )দাবাগত করা চামড়ার থলিতে করে কিছু সোনা রাসুলে আকরাম (সাঃ)এর নিকট পাঠান। তখনও স্বর্ণগুলো মাটি থেকে পৃথক করা হয় নি। রাসুলে আকরাম (সাঃ)এগুলো চার ব্যক্তির মাঝে বন্টন করে দিলেন। উযায়না ইবনে হিসন, আকরা ইবনে হাবিস , যায়িদ জাল খায়ল, চতুর্থ ব্যক্তি হয়তো আকলামা ইবনে উলাসা অথবা আমির উবনে তুফায়ল রাঃ)। তখন সাহাবাদের মধ্যে একজন বল্লেন, তাদের থেকে আমরাই এ মালের হকদার ছিলাম। এখবর রাসুলে আকরাম (সাঃ)এর নিকট পৌঁছার পর তিনি বল্লেন তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন তার কাছে আমি আমানতদার( সহিহ মুসলিম)। “স্ত্রী ” স্বামীর সম্পদের রক্ষক। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সন্তান ও যাবতীয় সম্পদ সে হেফাযত করবে। অনুমতি বাদে সম্পদ খরচ করতে পারবে না। ইয়াহিয়া ইবনে ইয়াহিয়া যুহায়র ইবনে হারব ও ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম রঃ …আয়িশা (রাঃ ) থেকে বর্ণিত রাসুলে আকরাম (সাঃ)বলেছেন, যদি কোন স্ত্রী লোক ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা না করে তার ঘরের খাদ্য থেকে কিছু দান করে তবে সে দান করার কারণে সে সওয়াব লাভ করবে। আর স্বামী তা উপার্জনের কারনে সোয়াব লাভ করবে।…( মুসলিম)। আমানত রক্ষা করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।
প্রতিশ্রæতি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কাউকে কথা দিলে কথা রাখতে হয়। হযরত আনাস (রাঃ )থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) আমাদের সামনে যে বক্তব্যই পেশ করতেন তাতে অবশ্যই বলতেন, … সাবধান, যার আমানতদারী নেই, তার ইমান নেই। আর যে অংগীকার বা প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেনা তার দ্বীনদ্বারী নেই। ( বায়হাকী, শুআবুল ইমান)। জমি-জমা, ধন-সম্পদ বন্ধক দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে হয়। ওয়াদা ও এক প্রকার আমানত। আবু ইবনে যুরারা রঃ …মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুফার কাযী শুরাহ জমি কেরায়া দেয়ার ব্যাপাওে দুই ধরণের আদেশ করতেন। কখনও তিনি গ্রহণকারীকে বলতেন, তুমি ঐ মুসিবতের কারণে সাক্ষী রাখ, যাতে তোমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়। আর কোন সময় তিনি মালিককে বলতেন, তুমি এই কথার সাক্ষী দান কর যে, মুখাবের খেয়ানত করেছে, অথবা তুমি তার থেকে আল্লাহর শপথ নাও যে সে তোমার খেয়ানত করেনি। ( সুনান নাসঈা।) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ ) হতে বর্ণিত। রাসুল রাসুলে আকরাম (সাঃ)বলেছেন, যদি তোমার মধ্যে চারটি জিনিস থাকে তবে পার্থিব কোন কোন জিনিস হাত ছাড়া হয়ে গেলেও তোমার ক্ষতি হবে না। ১. আমানতের হেফাযত ২. সত্য ভাষণ ৩. উত্তম চরিত্র ৪. পবিত্র রিজিক। বিশ্বাস ভঙ্গ করা আমানতের খিয়ানতের সামিল। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! জেনে শুনে আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করোনা এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত ( গচ্ছিত দ্রব্য) সম্পর্কে ও নয়। ( আনফাল-২৩) আমানতের খিয়ানত করার ব্যাপারে হাদিস শরিফের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাসুলে আকরাম (সাঃ)বলেন, যে আমানত রক্ষা করেনা তার ঈমান নেই। যে চুক্তি রক্ষা করেনা তার দ্বীন নেই। ( আহমদ) আবু হোরায়রা (রাঃ )থেকে বর্ণিত ।তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ)বলেছেন, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় সে আমানতদার ( তিরমিযি)। অন্য এক হাদিসে তিনি বর্ণনা করেন- যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে তার আমানত তাকে ফেরৎ দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করেছে তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না। ( তিরমিযি)
লেখকঃ প্রাক্তন প্রভাষক,শাহতলী কামিল মাদ্রাসা, সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন