আ.লীগ গানপাউডার, লগি-বইঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। তারা জন্মগতভাবে সন্ত্রাসী দল। আওয়ামী লীগ সেই দল যারা সন্ত্রাস করেই টিকে থাকে। আমরা যে দাবিতে (নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন) আন্দোলন করছি এই একই দাবি নিয়ে তারা গানপাউডার দিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিল। লগি-বইঠা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তারা নিজেরা সন্ত্রাসী হয়ে রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী বানিয়ে ফেলছে। দেশকে পুরোপুরি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র করে ফেলেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা বিএনপির উদ্যোগে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন। আমাদের এক কথা এক দাবি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে,।নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

পেটানোর দৃশ্য দেখে কাঁদলেন মির্জা ফখরুল

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির জনসমর্থন দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে পুরোপুরিভাবে অন্যপন্থায় চলে গেছিলো। আওয়ামী লীগ শিষ্টাচার জানে না। আওয়ামী লীগ কোনোকালেই ভদ্র ছিল না।

গয়েশ্বর রায়, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালামকে নতুন করে দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে হবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাবেক সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, বিএনপির প্রান্তিক বিষয়ক সম্পাদক অপর্ণা রায়, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।

তারেক-জোবাইদার মামলায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমানের মামলা চলার কোনো আইনগত উপাদান নেই। নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে- দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে পুনরায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশালে ফিরিয়ে নেওয়া।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিষ্টার কায়সার কামালসহ সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহে আমরা আশঙ্কা করছি যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সরকারি নীল নকশায় মিথ্যা মামলায় হয়ত বা সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত উপাদান নেই। কেননা তারেক রহমান সাহেবের প্রদেয় সম্পদ বিবরণী যা ২০০৭ সালে জমা দেওয়া হয়েছিল, তার পুরোপুরিভাবে আয়কর জমা দেওয়া হয়েছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ আদালতে চলমান এই মামলায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সাক্ষী নিয়ে আগামীকাল বুধবার রায় প্রচারের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। দেশে লক্ষ লক্ষ মামলার জট থাকলেও তাদের এই মামলায় ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। রাত ৮টা—৯টা পর্যন্ত এক তরফাভাবে সাক্ষী নেওয়া হয়েছে।
আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের বিচার কাজের বৈধতা বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের উপর পুলিশ ও সরকার দলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদেরকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে।
সরকার দীর্ঘদিন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ বিচার বিভাগ তার মধ্যে অন্যতম। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শুধুমাত্র সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানই নয়, বিরোধী দলীয় দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে। আমরা সর্বক্ষেত্রে বিচারের নামে প্রহসন প্রত্যক্ষ করছি।

ইতোপূর্বে আমাদের দলীয় প্রধান, জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে দীর্ঘদিন ধরে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। নিম্ন আদালতের সাজা উচ্চ আদালত কতৃর্ক নজীরবিহীনভাবে বাড়ানো হয়েছে। একজন বয়স্ক ও নারী হিসাবে আইনগতভাবে তার জামিন প্রাপ্তির অধিকার থাকলেও সেই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

বিগত ১৪ বছরে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করা হয়েছে।

এত কিছুর পরও দেশের মানুষ ন্যায়বিচার আশা করে। যদি অন্যায়ভাবে কোন কিছু করা হয়, তাহলে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের সর্বশেষ আশাটুকু শেষ হয়ে যাবে।