ইংরেজিতে মাস্টার্স পাশ করে ‘ঘর মোছা’ চাকরি

ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাশ করার পরে দীর্ঘদিন চাকরি হচ্ছিল না অতনুর। অবশেষে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাকে ঘর মোছার চাকরির সুযোগ দেয়া হয়। সম্মানজনক চাকরি না হওয়ায় ক্ষোভে-অভিমানে আত্মহত্যা করেন অতনু।

মঙ্গলবার রাতে ভারতের সোমনাথপুর থানার দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই দিনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে গেলে অতনু মিস্ত্রিকে (৩০) ঘর মোছার চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়।

যুবকের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করছে স্থানীয় প্রশাসন।

পুলিশের ধারণা, উচ্চ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন চাকরি না পাওয়ায় অবসাদের জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক।

পুলিশ সূত্র বলছে, সম্প্রতি প্রাথমিক ও হাইস্কুলে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অতনু। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় আটকে যান। তার পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন মৃতের বাবা চন্দ্রকান্ত বাবু।

চন্দ্রকান্তবাবু জানান, ‘মঙ্গলবার ছেলে আমাকে এসে বলল, ‘বাবা আমি ইংরেজিতে এমএ, বিএডও করেছি। কিন্তু বেসরকারি সংস্থায় ঘর মোছার কাজ পেয়েছি। ওরা বলছে, ‘হাউস কিপিং’। আমি কি ঘর মোছার জন্যই এত পড়াশোনা করেছি?’

তিনি বলেন, আমি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করি। তার পরে ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল ও।’

অতনুর মা ঊষাদেবী বলেন, ‘সন্ধ্যার পরেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল অতনু। রাতে ধাক্কা দেয়ার পরেও খুলছিল না। দরজা ভেঙে দেখি, গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলছে।’

চন্দ্রকান্তবাবু আরও বলেন, ‘ও আমাকে বলত, পরীক্ষার পরে টাকা দিলে চাকরি পাওয়া যাবে। আমি তাতেও রাজি হয়েছিলাম। ওর অনেক বন্ধু চাকরি পেয়ে পরে মোটরসাইকেল কিনে ফেলেছিল। আমার কাছে নানা সময়ে চাকরি না পাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করত। আমি বোঝাতাম, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।’

ভারতে এক বছর আগে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি বছর সেখানে অন্তত ৪৫ হাজার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বেকারত্বের কারণে। পশ্চিমবঙ্গে যে বেকারত্বের জেরে বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার ঘটনা, তা বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন সমীক্ষায়।

গত বছর রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় নীলাদ্রি দত্ত নামে এক ইঞ্জিনিয়ারের।

পরে তার বাবা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও উপযুক্ত চাকরি না পেয়ে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি।

কয়েক মাস আগে মালদহ মেডিকেল কলেজে ডোমের চাকরির জন্য জমা পড়ে ৩৫৩টি আবেদন। যার মধ্যে কিছু চিঠি দেখে চমকে উঠেছিলেন কর্তারা। আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন এক গবেষক, তিন জন মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং সাত জন বিএ পড়ুয়া। তাদের পছন্দের তালিকা থেকে বাদও দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত শিক্ষিত হওয়ার কারণে।

সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরির জন্যে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলাতেও জমা পড়েছে এমএ পাশদের আবেদন। এসব ঘটনা ঘিরে রাজ্য জুড়ে হইচইও কম হয় না।