ইইউ নাগরিকদের জন্য যা আছে থেরেসা মের প্রস্তাবে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদের পর যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইইউ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গত সোমবার পার্লামেন্টে তুলে ধরা ১৫ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট (ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকরের পর ইইউ নাগরিকেরা যুক্তরাজ্যে থাকতে চাইলে তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে (হোম অফিস) আবেদন করতে হবে।
যাঁরা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে আছেন, তাঁদের স্থায়ী বাসের অনুমোদন দেওয়া হবে। আর যাঁদের বসবাসের মেয়াদ পাঁচ বছরের কম হবে, তাঁরা অস্থায়ী বাসের অনুমোদন পাবেন। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর ইইউ নাগরিকেরা দুই বছর সময় পাবেন। এ সময়ের মধ্যে যাঁদের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে, তাঁরাও স্থায়ী বাসের আবেদন করতে পারবেন।
তবে ঠিক কোন দিন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে আসা (কাট অফ ডেট) ইইউ নাগরিকদের এ সুযোগ দেওয়া হবে—তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ‘কাট অফ ডেট’-এর পর যাঁরা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন বা করবেন, তাঁদের স্থায়ী বাসের সুযোগ লাভের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গত ২৯ মার্চ বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জানায় যুক্তরাজ্য। নিয়ম অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকর হবে। এই দুই বছরের কোনো এক দিনক্ষণকে ‘কাট অফ ডেট’ হিসেবে চিহ্নিত করা নিয়ে আলোচনা চলছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যেসব ইইউ নাগরিক স্থায়ী বাসের সুযোগ পাবেন, তাঁরা ব্রিটিশ নাগরিকদের মতোই শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন ও কল্যাণ ভাতাসহ সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। তবে তাঁরা ইইউ আদালতের অধীনতা হারাবেন। এর মানে হলো, বর্তমানে ইইউ নাগরিকেরা ব্রিটিশ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে ইইউ আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু ব্রেক্সিট কার্যকরের পর তা আর করতে পারবেন না। এ বিষয়ে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের জোর দ্বিমত রয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, স্থায়ী হওয়া ইইউ নাগরিকেরা পরিবার আনতে গেলে তাঁদের ব্রিটিশ নাগরিকদের মতো সমান আইনের মুখোমুখি হতে হবে। অর্থাৎ পরিবার আনতে তাঁদের বছরে আয় লাগবে কমপক্ষে ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড। বর্তমানে ইইউ নাগরিকদের পরিবার আনার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রেক্সিট প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটের পর যেসব ইইউ নাগরিক স্থায়ী বাসের আবেদন করেছেন, তাঁদের আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে। এ সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।
ইইউর পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে এক টুইট বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, থেরেসা মের প্রস্তাব সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা চান তাঁরা। ইইউ আইন অনুযায়ী নাগরিকদের অধিকার চান তাঁরা।
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলো শুরু থেকেই ইইউ নাগরিকদের শর্তহীনভাবে স্থায়ী বাসের নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
২০১৬ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দেয়। সেই থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউভুক্ত দেশের নাগরিক এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ভবিষ্যৎ কী হবে—তা প্রশ্ন হয়ে ওঠে। বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি দেশের ৩২ লাখ লোক যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে। আর ১২ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক আছে ওই সব দেশগুলোয়। গত ১৯ জুন যুক্তরাজ্য ও ইইউ বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন