ইতিহাস গড়ে আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স
প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে পারল না ক্রোয়েশিয়া। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে রবিবার সুবাস ছড়িয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল ফরাসিরা। ম্যাচে ফ্রান্স জয় পেয়েছে ৪-২ ব্যবধানে। এর আগে ফ্রান্স ১৯৯৮ সালে শিরোপা জিতেছিল ও ২০০৬ সালে রানার আপ হয়েছিল। অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়া এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল।
ম্যাচে ফ্রান্স যে চারটি গোল করেছে তার প্রথমটি ছিল আত্মঘাতী। এই গোলটি করেন ক্রোয়েশিয়ার মারিও মানজুকিচ। বাকি তিনটি গোলের মধ্যে অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান ১টি, পল পগবা ১টি ও কাইলিয়ান এমবাপ্পে ১টি করে গোল করেন। ক্রোয়েশিয়ার দুইটি গোলের মধ্যে প্রথম গোলটি করেন ইভান পেরেসিচ। দ্বিতীয় গোলটি করেন মারিও মানজুচকিচ।
এদিন বল দখলের লড়াইয়ে অবশ্য এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। ৬৬ শতাংশ সময় ধরে বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ক্রোয়েশিয়া। ৩৪ শতাংশ সময় ধরে বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ফ্রান্স। কিন্তু ফ্রান্স টার্গেটে শট নিয়েছে ছয়টি। ক্রোয়েশিয়া টার্গেটে শট নিয়েছে চারটি।
লুঝনিকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে ক্রোয়েশিয়ার আত্মঘাতী গোলে শুরুতেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ১৮তম মিনিটে এই আত্মঘাতী গোলটি করেন মারিও মানজুকিচ। ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গায় ফ্রি-কিক পায় ফ্রান্স। ফ্রি-কিকটি নেন অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করে ক্লিয়ার করে দিতে চেয়েছিলেন মারিও মানজুকিচ। কিন্তু বলটি চলে যায় জালে।
আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যাচে ১-১ সমতা আনে ক্রোয়েশিয়া। ২৮তম মিনিটে গোলটি করেন ইভান পেরিসিচ। ফ্রি-কিকের সূত্র ধরে গোলটি করে ক্রোয়েশিয়া। ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত শটে বল জালে পাঠান পেরিসিচ। ৩৮তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান। বলটি ডি-বক্সের মধ্যে পেরিসিচের হাতে লেগেছিল। কিন্তু রেফার প্রথমে ধরতে পারেননি। ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা রেফারির কাছে পেনাল্টির আবেদন জানান। রেফারি ভিএআর এর সহায়তা নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।
বিরতির পর ৪৮তম মিনিটে ম্যাচে সমতা আনতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ইভান পেরিসিচের দুর্দান্ত শট স্পট জাম্প দিয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে তুলে দেন। ৫৯তম মিনিটে ফ্রান্সকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন পল পগবা। ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে বাঁ-পায়ে জোরালো শট নেন পগবা। গোলরক্ষক সুবাসিচকে ফাঁকি দিয়ে বল চলে যায় জালে। কাইলিয়ান এমবাপ্পের গোলে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ৬৫তম মিনিটে গোলটি করেছেন তিনি। ডি-বক্সের সামনে থেকে রকেট গতির শটে বল জালে পাঠান তিনি। ৬৯তম মিনিটে ব্যবধান কমান ক্রোয়েশিয়ার মারিও মানজুকিচ। ডি-বক্সের মধ্যে তখন গোলরক্ষক একা বল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় দৌঁড়ে গোলরক্ষকের কাছে চলে যান মানজুকিচ। গোলরক্ষক মানজুকিচকে কাটিয়ে বল ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। মানজুকিচ বল শট দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন। ম্যাচের বাকি সময়ে কোনো গোল না হওয়ায় ৪-২ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স। ফরাসিদের শিরোপা জয়ের ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়েছেন অ্যান্তোনি গ্রিজম্যান।
এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘সি’ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ফ্রান্স। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তারা আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। এরপর তারা উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ফরাসিরা।
অন্যদিকে, ‘ডি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তারা ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা স্বাগতিক রাশিয়াকে পরাজিত করে। সেমিফাইনাল ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ক্রোয়াটরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন