ইবিতে দুই বিভাগের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

জিসান নজরুল, ইবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দু‘গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ১৩ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও উপস্থিত শিক্ষকরাও আহত হয়েছেন। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে আইন ও আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলন করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘটনায় হামলার জন্য আল-কুরআন বিভাগের যাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আল-হাদিস বিভাগের আমিনুর (জিয়া হল) ও দাওয়াহ বিভাগের হাসানুল বান্নাকে (লালন হল) ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে আজ সোমবার অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থী প্রেস কর্নারে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা এই ঘটনায় হামলার সাথে তারা জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন। এছাড়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কর্তৃক হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করাকে তাদের ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ন ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হিসেবে দাবি করেন।

এসময় তারা বলেন, আমরা এই ঘটনার সাথে কোনোভাবে জড়িত নই। ঘটনাস্থলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। আমরাও তাদের ন্যায় ঘটনা দেখতে গিয়েছি। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে মব সৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হলে সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা দু’পক্ষের শিক্ষার্থীকে থামাতে ও শান্ত করতে চেষ্টা করি। তাছাড়া এখানে আমাদের ভাইয়েরা মারামারি করবে আর আমরা থামাব না এটি একজন সচেতন শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না। তাই আমরা কেন সেখানে গিয়েছি? এই প্রশ্ন করাও অযৌক্তিক।

তারা আরো বলেন, তদন্ত কমিটি হয়েছে। সবকিছু তদন্ত হবে সেখানে কারা কি করেছে সেটি উঠে আসবে। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সেখানে উপস্থিত থেকে যদি আমরা অপরাধী হই, তাহলে উপস্থিত সবাই অপরাধী হবে। দীর্ঘদিন আমরা বৈষম্যবিরোধীদের সাথে আন্দোলন করে আসছি তাই আমাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।

এর আগে গতকাল বোরবার সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, গত শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিসে রাকিব তার ভুল স্বীকার করে মাফ চায় এবং এ বিষয়ে লিখিত মুচলেকা দিতে সম্মত হয়। এই সিদ্ধান্তকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানায়। তবে মিটিংয়ের এই সিদ্ধান্ত বাহিরে জানাতে গেলে সেখানে উপস্থিত আল ফিকহ ও অন্য অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী ‘আলফিকহ’ বিভাগের নামে স্লোগানসহ বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়। এরপর তারা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিল যাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আমিনুর (জিয়া হল), হাসানুল বান্না (লালন হল)। এদের কেউ আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী নন। তবে তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তবে সেখানে উপস্থিত আহত ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদেরকে তাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এসময় প্রক্টর নিবৃত্ত করতে আসলে হামলার মাঝখানে পরে যান। যেখান থেকে আইনের শিক্ষার্থীরা প্রক্টর স্যারকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন।

এছাড়া তারা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, আমাদেরকে মারধর ও আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে। গতরাতে বাস ভাংচুরের ঘটনার সাথে আইনের শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল না, তাই এ ঘটনার জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। আইন বিভাগের ইশমামকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আমাদের ন্যায্য দাবিকে কুচক্রী মহল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এর প্রেক্ষিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস, হল ও মেসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই অবিলম্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের মাঝে সমাধানের বিষয়টি জানানোর সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন এবং আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করলে উভয় বিভাগের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রক্টরিয়াল বডি, উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে আইন বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী প্রক্টর মহোদয়কে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। ফলে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে আমাদের ৫ শিক্ষার্থী আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, সব বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সানন্দা বাসে সিট ধরা নিয়ে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন অভ্র সঙ্গে আল-ফিকহের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রাকিবের বাকবিতণ্ডা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা সুমন প্রক্টর ও তার আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জানায়। পরে আইনের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে গাড়ি আটকায় ও বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে বলে জানায় বাসের চালক। পরে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হয়। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি উভয়পক্ষকের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।

আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে প্রক্টর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানায়। তখন চলে যাওয়ার সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বললে অনুষদ ভবনের সামনে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা আরম্ভ হয়। এসময় আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে ধাক্কা দেন। আল-ফিকহ্ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে ঝাল চত্বরে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও আহত হন। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।