ইবিতে শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের মারামারি, আহত ৭

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেসের বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ( ১৩ মে) সন্ধ্যায় সাড়ে ৬ টায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন নুরজাহান মহিলা হোস্টেলে এই ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন পদমদী এলাকার নুরজাহান মহিলা হোস্টেলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত ফারিয়া। ওই ছাত্রীর গত ৪ মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বিল দিতে বলেন। পরে আজকে ওই ছাত্রী বিল পরিশোধ করতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওই ছাত্রীকে মেস ছেড়ে দিতে বলেন ম্যানেজার। পরে ওই ছাত্রী বিভাগের বন্ধু আবু হানিফ পিয়াসকে বিষয়টি জানান। পিয়াস মেসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে নিরাপত্তাকর্মী তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। পরে পিয়াস আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে সেখানে গেলে ম্যানেজারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মাঝে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে সেখানে স্থানীয়রা এসে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে সমাজকল্যাণ বিভাগের সাকিব আলি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আবু হানিফ পিয়াস, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিনিউকেশন টেকনোলজি বিভাগের নাইম রেজা ও ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির, স্থানীয় আশিক ও সাংবাদিকসহ ৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে মেফতাহুল জান্নাত ফারিয়া বলেন, আজ সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়েছিলাম। টাকা নেওয়ার সময় ম্যানেজার বাজে ইঙ্গিত ও স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। পরে ওনার হাতে টাকা না দিয়ে ছুড়ে দিই। তখন আমাকে ‘বেয়াদব মেয়ে’ বলে সম্বোধন করে এবং পরিবারের নাম্বার চায়। পরে ধমক দিয়ে মেস ছেড়ে দিতে বলে। পরে আমি বিষয়টি আমার বন্ধুকে জানাই। বন্ধু পিয়াস বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজার সাথে কথা বলতে গেলে নিরাপত্তাকর্মী তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। পরে অন্য বন্ধুরা আসলে তাদেরকে স্থানীয় লোকজন তাদের মারধর করেন।

তিনি আরো বলেন, আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তাই নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর আজ অভিযোগ দিবো।

ফারিয়ার বন্ধু আহত আবু হানিফ পিয়াস বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিল। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও মেসের অন্য মেয়েদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন ম্যানেজার। আজকেও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন সেখানে যাই। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়।

নাঈম রেজা বলেন, আমি রাতে খেতে বের হইছিলাম, তখন দেখি ওখানে বন্ধু-বান্ধবরা আছে। সেখানে গিয়ে দেখি বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে মেস ম্যানেজার বাজে আচরণ করেছে। পরে ওখানে হাতাহাতি মতো হয়েছিল। এতে কয়েকজন ইঞ্জুরি হয়।

নুরজাহান মেসের ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বলেন, ওই মেয়ে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করছে সেগুলোর কোন সত্যতা নেই। আমি তার সাথে এমন কোন আচরণ করিনি।

মেসের দায়িত্বরত কর্মচারী শিউলী বলেন, এই মেয়েটা এর আগেও আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে। সে মাঝেমধ্যে অনেক রাতে বাইরে যাওয়া আসা করে।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, মেস মেনেজারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সেটা বাড়িওয়ালাকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু ওই মেয়েটা সেটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে একটা হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীরা এসব করছে তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এস আই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই আমরা এখানে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি এখনো কোনো পক্ষেরই লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির কেউ উপস্থিত না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থালে কোনো সহকারী প্রক্টর থাকে না। আমি আমজাদকে বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বলেছি। আমি নিজেও রাত ১১ টা পর্যন্ত মনিটরিং করেছি।