ইবির অবতরণিকা উৎসবে মারামারি: অভিযুক্তদের পাল্টা অভিযোগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অবতরণিকা উৎসবে টি-শার্ট বিতরণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন অভিযুক্তরা। শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বরাবর এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন তারা। অভিযোগে তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও তাদের নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় মারধরের শিকার রানা আহমেদ ও মুশফিকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এতে তাসিন ইসলাম রাহিন, মোবারক হোসেন আশিক ও রাব্বি ফকিরসহ ৩০-৪০ জন অতর্কিত হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
অভিযোগ পত্রের সূত্র মতে, গত ১৬ মার্চ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অবতরণিকা উৎসবে আমাদের সাথে টি-শার্ট নিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান , সাব্বির রহমান শাওন ও রানা আহমেদ অভির সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরে বিষয়টি সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয়। এরপরেও এ ঘটনার জের ধরে উক্ত তিনজন আমাদের আশপাশে বাইক নিয়ে মহড়া দেয় এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এবং আমাদের ব্যাচের বান্ধবীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। পরে আমরা তাদের সাথে সৃষ্ট ঘটনার সমাধান করতে গেলে আমাদেরকে বলা হয় ক্যাম্পাসের গেইট পার হলেই কিন্তু আমাদের বাড়ি। চিনিস! একদম মেরে পুঁতে ফেলবো। এক র্পয়ায়ে তাসিন ইসলাম রাহিনকে ইট দিয়ে আঘাত করতে আসে মুশফিকুর রহমান। সেই সময়ে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে হাতাহাতি সৃষ্টি হয়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন বন্ধু আহত হয়।
এছাড়াও উৎসবটির কার্যনির্বাহী কয়েকজন সদস্যও একইদিন প্রক্টর বরাবর লিখিত আরেকটি অভিযোগ জমা দেন। তাদের অভিযোগপত্র মতে, অভিযোগ অভিযুক্তদের পাল্টা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিছু স্থানীয় শিক্ষার্থী উৎসবটিতে প্রথম থেকেই হুমকি দেয় এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী ছেলেদের নিয়ে এসে সবাইকে হেনস্থা করে। তারা (মুশফিক ও সাব্বির শাওন) সমন্বয়ের কথা বলে পরে শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরন করে ও স্থানীয় প্রভাব দেখায়। তাছাড়া উৎসবটিতে স্থানীয়দের বাইকে করে এনে মেয়েদের উত্যক্ত করে ও হুমকি দেয়। উক্ত ঘটনায় আমরা (মোবারক হোসেন, মাহমুদুর রহমান সহ ২৮ জন) ইভেন্ট অর্গানাইজার ছিলাম। একপর্যায়ে বাংলা মঞ্চে বিশৃংখলা দেখে দৌড়ে যাই ও দেখি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীদেও সাথে অন্যদের ঝামেলা চলছে। আমরা তাদের শান্ত হতে অনুরোধ করি ও এই ২ পক্ষের ঝামেলাতে আমাদের কোনও সংযুক্ততা ছিল না।
প্রদত্ত অভিযোগের বিষয়ে রানা আহমেদ অভি বলেন, এগুলো সম্পন্ন বানোয়াট অভিযোগ। আমরা যদি অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে তাদেরকে অতর্কিত হামলা করতাম, তাহলে তো তাদের কেউ কেউ আহত হওয়ায় কথা। কিন্তু কেউ তো আহত হয়নি। আর কোনো মেয়ের সাথে এরকম আমাদের কারো কিছুই হয়নি, আমরা জানিও না। স্থানীয় কোন লোকই সেখানে ছিল না। পারলে তারা প্রমাণ দিক। এছাড়াও যে দুটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে এমন কয়েকজনের নাম আছে, তারা অভিযোগপত্র সম্পর্কে কিছু জানেও না।
এছাড়াও মুশফিকুর রহমান বলেন, তারা যে অভিযোগ জমা দিয়েছে তা সম্পন্ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যদি তা সত্যই হয়ে থাকে তবে ঘটনার ২দিন পরে এসে কেন অভিযোগ দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা মঞ্চে ২০২০ ২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাচ ডের “অবতরনিকা উৎসব” চলছিলো। উৎসবে টি-শার্ট বিতরণের দায়িত্বে ছিল ইতিহাসের সংস্কৃতি বিভাগের মুশফিকুর রহমান। তিনি সবাইকে টি-শার্টগুলো গুনে দিচ্ছিলেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিআর তাসিন ইসলাম রাহিন এলোমেলো ভাবে টি-শার্ট নিতে গেলে মুশফিক তাতে বাধা দেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে দুপুরের দিকে এর জের ধরেই রাহিন ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী রাব্বি ফকির ও ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মোবারক হোসেন আশিকে নেতৃত্বে একই বিভাগের মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শরিফসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রানা আহমেদ অভি, মুশফিকুর রহমান ও সাব্বির রহমান শাওনসহ ৩ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করেন। পরে আহতদের দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন