ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র দুই পরিচালক পদ ছাড়লেন
ইসলামী ব্যাংকের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক সৈয়দ আহসানুল আলম পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল মাবুদ। গত মঙ্গলবারই স্বতন্ত্র এ দুই পরিচালককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দুজনই পদত্যাগ করেন।
যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্ত্ত খান বলেন, তারা দুজনই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগ পত্র অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। এরপরই পদত্যাগ কার্যকর হবে।
গত মঙ্গলবার ব্যাংকটির ৩৪ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) আহসানুল আলম ও আবদুল মাবুদকে পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠে। এজিএম ও পর্ষদের সভায় সৈয়দ আহসানুল আলম ছাড়া অন্য ১৮ পরিচালকই উপস্থিত ছিলেন। কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব অডিটোরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাদের দুজনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন চেয়ারম্যান আরাস্ত্ত খান জানান, তারা স্বতন্ত্র পরিচালক পদে বহাল থাকবেন।
ব্যাংকটির পরিচালকদের কোন্দল আলোচনায় শুরু হয় স্বতন্ত্র পরিচালক সৈয়দ আহসানুল আলমের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টের মাধ্যমে। গত ১১ মে তিনি নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানান, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিয়ে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাই পরিচালনা পর্ষদ ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদে দায়িত্ব পালন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার সরে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরপর গত ১৩ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে স্বতন্ত্র এই পরিচালক কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানান, জাকাতের ৪৫০ কোটি টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ইফতারের ১৩ কোটি টাকা এবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের সুবিধাভোগীদের তালিকাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে জাকাতের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলের প্রদানের বিষয়ে সমালোচনা তৈরি হয়।
এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ মে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী। গত ১৭ মে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার জবাব দিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম ব্যাংকের গোপনীয়তা ভেঙেছেন। পরিচালক হওয়ার সময় তিনি গোপনীয়তা রক্ষার যে শপথ করেছিলেন, তা লঙ্ঘন করেছেন। ব্যাংক নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁকে পদত্যাগ করতে বলব না, উনি নিজে সরে গেলে সমস্যা নেই।’
এরপর ২০ মে সৈয়দ আহসানুল আলমসহ ৭ পরিচালক স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকের শীর্ষ পদ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পরিচালকবৃন্দ বলেন, হুমকির মুখে যদি কোনো পরিচালককে পদত্যাগ করানো যায়, তবে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিচালকদের বিদায় নিতে হবে। হুমকির মাধ্যমে কোনো পরিচালককে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করা হলে অনেক পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করবেন। বিজ্ঞপ্তিতে সাক্ষর করেন, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক আব্দুল মতিন, বোরহান উদ্দিন আহমেদ ও কাজী শহিদুল আলম। বাকিরা হলেন স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল মাবুদ, সাইফুল ইসলাম ও হেলাল আহমেদ চৌধুরী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন