উন্মুক্ত নকলের উৎসবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা
ঠাকুরগাঁওয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) অধীনে চলমান এইচএসসি পর্যায়ের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় ছড়াছড়ি নকলের অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্র পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের ম্যানেজ করে তাদের সামনেই প্রকাশ্যে বই খুলে পরীক্ষা দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল বিএম কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৬ এপ্রিল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হয়। ১০ মে শুক্রবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালীন রাণীশংকৈল বিএম কলেজ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় পরীক্ষার্থীদের কেউ পুরো বই আবার কেউ কাগজের নোট পাতা বেঞ্চের ওপর রেখে তা দেখে উত্তরপত্রে উত্তর লিখছে অবাধে। পরীক্ষার কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষককে দেখা গেলেও তিনি মোবাইল ফোন নিয়ে ফেসবুকে ব্যস্ত ছিলেন।
এমনভাবে বই খুলে পরীক্ষা দেওয়ার দৃশ্য দেখে যে কেউ দ্বিধাহীন বলতে পারেন, শিক্ষকদের সাথে পরীক্ষার্থীদের মনে হয় পূর্ব থেকে এমনটাই চুক্তি ছিল। নকল বন্ধে শিক্ষকদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এ বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাণীশংকৈল বিএম কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট ৪৯৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে একটু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রতিটি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে চা-নাশতা ও মেজিস্ট্রেট ম্যানেজ করার জন্য আলাদাভাবে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা নেন।
একইভাবে গোপনীয়তা রক্ষার শর্ত দিয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক বলেন, এই কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেনকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রসচিব মোহা. হাসান আলী নবাবের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথমে চা খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এমন চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরে তিনি বলেন, অনেক চাকরিজীবী শুধুমাত্র সনদপত্র পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই বয়সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন। এই সনদ দিয়ে তারা নতুন করে চাকরি করবেন না। কোনো উপায় নাই বিধায় শুধু মাত্র প্রমোশন ও নিজেদের গ্রেড বাড়ানোর জন্যই এমন কষ্ট করে এই বয়সে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি নতুন এসেছেন তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু জানেন না। আর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকা রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি প্রশাসনিক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে শুক্রবার কেন্দ্রে যেতে পারেননি। কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নকল চললে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢাকায় থাকার কারণে এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারবেন না। আর জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন