উপহারে অনিয়ম মামলায় এরশাদ খালাস
উপহার সামগ্রীর অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে দেয়া তিন বছরের সাজা বাতিল করে খালাস প্রদান করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার মামলায় সাজার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এরশাদের আপিল গ্রহণ এবং রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এরশাদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান।
গত ১২ এপ্রিল উভয় পক্ষের আপিলের শুনানি শেষে রায়ের দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। নির্ধারিত দিনে হাইকোর্ট সকাল থেকে বিকেল পোনে ৪টা পর্যন্ত রায় পাঠ করে শেষ করেন।
রায় ঘোষণার পর এরশাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতির সাজা বাতিলের করা একটি আপিল এবং রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল শুনানি শেষে রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য ছিল। নির্ধারিত দিনে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে এরশাদের আপিল গ্রহণ করে তাকে খালাস দেয়া হয় এবং রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল খারিজ করে দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এরশাদকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
অপরদিকে, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, উপঢৌকনের দুর্নীতি মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরাশাদকে খালাস দিলেও তার ঘরে পাওয়া অর্থ দিতেই হবে।
তিন বলেন, এটি একটি অদ্ভুত রায়। দুদকের সঙ্গে পরামর্শ করে এরশাদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত ৩০ মার্চ এ মামলায় সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলে পক্ষভুক্ত হয় দুনীর্তি দমন কমিশন (দুদক)। এরও আগে, ২৭ মার্চ এরশাদের দুর্নীতি মামলার আপিল শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি।
২৩ মার্চ এরশাদের আপিলের রায় ঘোষণার জন্য নির্ধারিত থাকলেও বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা না করে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর দীর্ঘ ২৪ বছর পর দুনীর্তি মামলায় সাজার বিরুদ্ধে এরশাদের আপিল শুনানি শুরু হয়। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেয়ার অভিযোগ ওঠে এরশাদের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে ১৯৯১ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দিন আহমেদ সেনানিবাস থানায় এরশাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এক কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৫ টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।
১৯৯২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত এরশাদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে ওই অর্থ ও একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন এরশাদ। ২০১২ সালের ২৬ জুন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে এরশাদের আপিলে পক্ষভুক্ত হয় দুদক।
গত ৯ মার্চ হাইকোর্টে এ মামলায় আপিল শুনানি শেষ হলে ২৩ মার্চ রায়ের দিন রাখা হয়। কিন্তু এরশাদের সাজা বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল অনিষ্পন্ন থাকায় সেদিন আর রায় না দিয়ে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস মামলার সব ফাইল পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতির কাছে। পরে প্রধান বিচারপতি তিনটি আপিল একসঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চে পাঠান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন