ঋণ পরিশোধে মেয়েকে যৌনকর্মের জন্য বাধ্য হচ্ছে পরিবার
একে তো ঋণ তারও পর স্বামী সন্তানও নেই! মহাজনের টাকা পরিশোধের জন্য তাড়া। দিন যাচ্ছে আর সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। এমনি দিশেহারা থান থান হিতুর।
মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের শহরতলীতে বাস তার। সেখানে সেইক্কি খানাউংঢো এলাকায় একটি নোংরা পুকুরের ওপর কাঠের পাটাতনে তৈরি এক কক্ষে তাদের ঠাসাঠাসি করে আটজন থাকেন।
ঘরের এক কোণে একটি সেলফের ওপর সাজানো টেলিভিশন। কিন্তু, টিভি থাকলেও তাতে আকর্ষণ কমে গেছে। কারণ, চলতি বছরের শুরুর দিকে টিভিটি বন্ধক রেখে নগদ টাকা ধার নিয়েছেন তিনি। স্বামী বেকার হয়ে পড়ায় বোনের কাছ থেকে ৪০ হাজার কিয়াত (২৪০o টাকা) ধার আনতে হয়েছে। পুরো অর্থ একসঙ্গে কখনোই শোধ দিতে সক্ষম হন না তিনি। এজন্য লভ্যাংশ হিসেবে বোনকে দিতে হয় দুই হাজার কিয়াত।
হিতুয়েই ইয়াঙ্গুনে ঋণের ভাড়ে জর্জরিত একমাত্র নারী না। সম্প্রতি তিনটি শহরে সেভ দ্য চিলড্রেনের এক জরিপে দেখা গেছে, এসব শহরের ৮৫ ভাগ মানুষই স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। এই ঋণ তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করলেও স্থায়ী একটি চক্রে আটকা পড়ে যান। দিনে তাদের সুদ দিতে হয় পাঁচ শতাংশ। কখনো মাসে ৩০ শতাংশ।
এসব এলাকার বাসিন্দাদের গড়ে প্রতিদিন ১ দশমিক ৪৮ ডলারের (প্রায় ১২০ টাকা) ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, কারও দৈনন্দিন খরচ ১ দশমিক ৯০ ডলারের (প্রায় ১৫০ টাকা) নিচে হলে তাকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ধরতে হবে। অথচ মিয়ানমারে দেখা যায়, বেশিরভাগই দৈনিক ১ হাজার কিয়াতের (প্রায় ৬০ টাকা) বেশি খরচ করতে পারে না। ৫০ শতাংশ মানুষ শুধু খাদ্য কেনার জন্য ঋণ নেয়।
হিলায়িং থায়ার শহরের একটি বাঁশের তৈরি বাড়িতে বাস করেন মা এই পি। এক সময় সবজি বিক্রি করতেন। দেশের বাইরে জেলের কাজ করতো তার স্বামী। তখন পর্যন্ত সন্তানদের নিয়ে ভালই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে বাবা এবং স্বামী- দুইজনেরই মৃত্যু হয়। মৃত্যুটাও মিয়ানমারে একটি বড় ব্যবসা। লাশ সমাহিত করতে এবং ডেথ সার্টিফিকেট পেতে খরচ করতে হয় ১ লাখ কিয়াত। স্বামীর মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ পেলেও বাবার মৃতদেহ সমাহিত করতে আরো ৫০ হাজার কিয়াত ঋণ নিতে হবে তাকে। কিন্তু প্রতিদিন পাঁচ শতাংশ সুদ দেয়াও সম্ভব না তার পক্ষে।
এরপরই এলাকার কিছু লোকের সঙ্গে পরামর্শ করে যৌনকর্মে নেমে পড়েন এই পি। যৌনকর্মীদের ঋণ দিতে পারলে খুশি থাকে ঋণদাতারাও। তারা দ্রুত অর্থ পরিশোধ করতে পারে। তবে দৈনন্দিন খরচ আর ঋণের অর্থ পরিশোধের পর হাতে কিছু থাকে না তাদের। একজন যৌনকর্মী প্রতিবার সঙ্গমে উপার্জন করেন ১০ থেকে ১৫ হাজার কিয়াত। দিনে তিনবার এই কাজ করতে পারেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারে এই পেশা বিপজ্জনক। ১৯৪৯ সালের আইনে যৌনকর্ম নিষিদ্ধ দেশটিতে।
ওই নারী বলেন, নভেম্বর থেকে খুব বেশি খদ্দের পাইনি আমি। তখন থেকে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। পুলিশ আমাদের চেনে। আমরা কোথায় খদ্দেরের সঙ্গে কথা বলি, তাও জানে। তারা আমাদের ধরার অপেক্ষায় থাকে। তাদের টাকা না দিলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’
তিনি জানান, কখনো কখনো পুলিশ এসে টাকা দাবি করে। গ্রেপ্তার এড়াতে স্থানীয় একটি গেস্ট হাউসে পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে দৈহিক মিলন করতে হয় তাকে। পুলিশি হয়রানি এড়াতে আবার দালাল নিয়োগ দিতে হয়। কুমারী মেয়েদের এই কাজে আনতেও লাগে দালাল। এত খরচের পর আসলে তাদের কাছেও উল্লেখযোগ্য অর্থ থাকে না। সূত্র : আল জাজিরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন