এখনো পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি ইসি
দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভালো হলেও এখনো সবার পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কুমিল্লা ও রংপুরে ভালো করার পর ঢাকায় এসে নির্বাচন নিয়ে ইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতিও সংশয় তৈরি করছে।
একটি সংকটপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে এই কমিশনকে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। এর আগে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে হবে। মূলত এই বছরটাই হবে ইসির চূড়ান্ত পরীক্ষার বছর।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইসির ভূমিকায় সন্তুষ্ট। তবে বিএনপি এখনো পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার নিজেদের শপথ নেওয়ার এক বছর পূরণ করেছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
এই কমিশনের পূর্বসূরি কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন ছিল বিতর্কিত। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জবরদখলের ঘটনায় ইসি ও নির্বাচনব্যবস্থার ওপর আস্থা শূন্যের কোঠায় চলে গিয়েছিল। এই অবস্থায় নতুন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অংশীজনদের আস্থা অর্জন।
প্রথম বছরে কমিশন কতটুকু আস্থা অর্জন করতে পেরেছে? সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, সার্বিকভাবে ইসি পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তাদের আস্থা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। ইসি একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। শুধু নির্বাচন করা নয়, তাদের দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। কিন্তু তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে চরমভাবে শঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে।
কে এম নুরুল হুদার কমিশনের জন্য বড় পরীক্ষা ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে বেশ কিছু আইনি জটিলতাও ছিল। কিন্তু জটিলতা নিরসন না করেই তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজধানীতে এই নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহ ছিল সরকারেরও।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁরা সংবিধান অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও তাঁরা তা করবেন।
এই কমিশনের সময়ে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ছিল প্রশংসিত। তবে গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে ১২৬টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় জাল ভোট, ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল মারা, নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট পেপার ভোটারদের দেওয়া, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখনো ইসি বড় পরীক্ষার মুখে পড়েনি। ঢাকায় নির্বাচন হলে একটি বড় পরীক্ষা হতো। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়নি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সিইসির সাম্প্রতিক বক্তব্য ইতিবাচক। এটা নিশ্চয় বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে। তবে তিনি মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ইসির ওপর আস্থা-অনাস্থার জায়গাটা প্রকট হবে। কারণ, এখন থেকেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে মন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত এক বছরে ইসি এমন কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা নেয়নি বা নিতে পারেনি, যাতে তাদের ওপর আস্থা তৈরি হতে পারে। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তারা নিজেদের কর্তৃত্বে করতে পারেনি।
প্রথম বছরে ইসির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সাতটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ। এগুলো হচ্ছে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, নির্বাচন-প্রক্রিয়া সহজ ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ গ্রহণ, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত দলের নিরীক্ষা এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বাড়ানো।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও ইসি এর খসড়াই প্রকাশ করতে পারেনি। এখন আগের আইনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিপক্ষে।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, গত এক বছরে ইসি তাদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে পালন করেছে। ভবিষ্যতে ইসি আরও সুন্দরভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং সব দল ইসিকে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করেন।
ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় আইনের খসড়া তৈরি করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও তা করতে পারেনি ইসি।
আবার পরামর্শ নেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ে সংলাপ করতে পারলেও সুপারিশ চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করতে পারেনি ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রাধান্য পেয়েছিল সেনা মোতায়েন। বিএনপিসহ ১১টি দল জাতীয় নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দেয়। অন্য দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে। ইসি সূত্র জানায়, ইসি বিএনপির সেনা মোতায়েন প্রস্তাব আমলে নিচ্ছে না। সৌজন্যে : প্রথম আলো
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন