এবার অপসারিত হতে পারে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা, চলবে প্রশাসক দিয়ে
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় কর্মস্থান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মেম্বারদের অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাধারণ মানুষের সেবার কথা বিবেচনায় রেখে এত দিন তাদের বহাল রেখেছিলেন। কিন্তু সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় কর্মী এই পদে থাকায় সরকারকে নানাভাবে বিপদে ফেলতে পারে এ আশঙ্কা থেকেই তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সেবা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলায় মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, তারা বিগত হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। তাদের পরোক্ষ সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত থাকতে পারে। বিভিন্ন স্থানে যেসব সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে এসব ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের কথা বলেছেন।
সূত্র বলছে, স্থনীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী, পদত্যাগ করলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য হবে। অথবা পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হতে পারে। এছাড়াও দুর্নীতি, অসদাচরণ বা নৈতিকস্খলনজনিত কোনো অপরাধ কিংবা বিনা অনুমতিতে দেশত্যাগের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী তাদের অপসারণ করতে পারে সরকার। তারপরও অতীতে প্রায় ১ হাজার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়য়ের অপরাধ প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ আবু আলম শহীদ খান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এমন সব নির্বাচন হয়েছে যে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষ এখন ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এসব জনপ্রতিনিধিদের পদত্যাগ বা অপসারণ চাচ্ছে। বাস্তবতার নিরীখে বর্তমান সরকারের এসব বাস্তবায়ন করা উচিত হবে। অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যেমনভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে ইউপি পরিষদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। তাদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন খোলা থাকলেও অনেক জায়গায়ই নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা পরিষদে যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা যেসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন সেসব জায়গায় তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশের বেশকিছু জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে মিছিল কিংবা পরিষদ ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও চলছে।
আওয়ামী লীগ নেতা এমন কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে সাড়ে চার হাজারের ওপরে ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এসব ইউনিয়ন পরিষদের বেশিরভাগেই নির্বাচন হয়েছে দুই বছর আগে। ২০১৮ সালের পর স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচন বয়টক করে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। যে কারণে গত ৬ বছরে হাত গোনা কিছু ইউনিয়ন, উপজেলা বাদে বেশিরভাগেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় অবস্থান করলেও তারা দপ্তরে বসছেন না। একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সব ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা খুবই কষ্টের। এজন্য দাপ্তরিক কার্যক্রমে দারুণভাবে ব্যাহত হয়। তাছাড়া জনবলের অভাব তো রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন