এবার আমরণ অনশনে লতিফ সিদ্দিকী
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গতকাল রোববার থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। এবার তিনি আমরণ অনশনের ঘোঘণা দিয়েছেন।
সোমবার জেলা প্রশাসককে পাঠানো চিঠিতে আমরণ অনশনের কথা জানিয়েছেন তিনি। তার কোনো ক্ষতি হলে নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকী লিখেছেন, আমার ধর্মঘটের ১৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একই সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার। আমার যদি কোনো ক্ষতি হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলে ঘোষণা দিচ্ছি।
এই ঘোষণার পর দুপুর আড়াইটার দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. শরীফ হোসেন খান বলেন, লতিফ সিদ্দিকী সাহেব উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তিনি ওষুধও খাচ্ছেন না। খাবার না খাওয়ায় ধীরে ধীরে তার শরীরের সুগার কমে যাচ্ছে। এতে শরীর নিস্তেজ হয়ে শারীরিক ঝুঁকি বাড়ছে।
আমরণ অনশন পালন প্রসঙ্গে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, অক্ষম নির্বাচন কমিশনারই আমাকে এমন পথে নামতে বাধ্য করলেন।
রোববার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বল্লবভবাড়ি ও সরাতৈল এলাকায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা হয়। এ সময় বহরে থাকা চারটি গাড়ি ভাঙচুর এবং তার অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। লতিফ সিদ্দিকী হামলার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীর কর্মীদের দায়ী করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, হামলাকারীদের গ্রেফতার ও কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থানের ঘোষণা দেন।
এদিকে সোমবার টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ও নিকটাত্মীয়রা আমরণ অনশনরত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে দেখতে যান।
এ সময় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমার অনশন প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহিংসতামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, আমি শেখ হাসিনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না, আমি সরকারকে বিব্রত করতে চাইনা। আমি চাই- সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন। আমি যদি শেখ হাসিনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইতাম, তাহলে আমি এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এই অবস্থান ধর্মঘট করতাম। তাহলে কি হত? যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। আমি তা চাই নাই। আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আমি জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে চাই না। আমি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। দাবি মানা হলে কাউকে বলতে হবে না নিজেই চলে যাব, যতক্ষণ মানা না হবে ততক্ষণ কোথাও যাব না।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, কালিহাতীতে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে আমার কর্মী-সমর্থকদের পুলিশ ফোন করে প্রকাশ্যে-গোপনে হুমকি দিচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা নিয়মিত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। আমি ইতোপূর্বে তিনটি পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার কোনো ব্যবস্থাই নেননি।
হামলায় আহত ইউপি সদস্য মোর্শেদা খানম ডলি জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার তার লাইসেন্সকৃত বন্দুক নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেন। সরকার দলীয় প্রার্থী হাছান ইমাম খানের কর্মী ওবায়দুল তালুকদার, আব্দুল হাই মেম্বার, জহুরুল, সোহেল সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর, রাসেল, সুলতান মেম্বারসহ প্রায় দেড়শ লোক হামলায় অংশ নেয়। এ সময় তিনিসহ অন্যকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষা করেন। অথচ লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কালিহাতী থানা পুলিশের এএসআই মো. সেলিম হোসেন জানান, বাড়ির ভেতরে বসে কথা বলার সময় বর্তমান এমপি হাছান ইমাম খানের লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। আমরা নেতা লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষা করেছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন