এবার ভিয়েতনামে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন দিন দিন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর স্বজনপ্রীতির আখড়া হয়ে উঠছে। সময় সংবাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নারী নিপীড়নের তথ্য।
সম্প্রতি ভিয়েতনামের হ্যানয় দূতাবাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের বিরুদ্ধে অধ্বস্তনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময় দূতাবাস কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ায় হ্যানয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত মো. সাখাওয়াত হোসেনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ। পরে নিরাপত্তা লঙ্ঘন, অসদাচরণ, কাজের প্রতি অনীহা, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর তাকে বরখাস্ত করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূতের নির্যাতনে অতিষ্ঠ মো. সাখাওয়াত হোসেন পালিয়ে দেশে এসে মন্ত্রণালয়ে সব বিষয় জানান। কিন্তু অদৃশ্য কোনো শক্তির হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের কর্মকাণ্ডের তদন্ত না করে মো. সাখাওয়াত হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। প্রশ্ন ওঠে, কাউকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রদূতের থাকে না, তাহলে বার বার এই ক্ষমতা প্রদর্শনের সাহস তিনি কোন অদৃশ্য উৎস থেকে পান?
২০১৯ সালের ১০ মার্চ এ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি সতর্কীকরণ নোটিশ থেকে জানা যায়, বিদেশি দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় নিরাপত্তা প্রহরী মো. সাখাওয়াত হোসেনকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য প্রথমে বরখাস্ত এবং পরে পুনর্বহাল করা হয়েছে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি মো. সাখাওয়াত হোসেনকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। তার জবাবে তিনি ভবিষ্যতে এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেন। ১০ মার্চ জারি হওয়া সতর্কীকরণ নোটিশে তার সেই অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ক্ষমা করে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয় এবং ৩ বছরের জন্য বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে পদায়ন স্থগিত করা হয়।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, মো. সাখাওয়াত হোসেনকে যদি বরখাস্ত করা হয়েই থাকে তবে আবার তাকে সতর্কীকরণ নোটিশ দেয়া হয় কিভাবে, মন্ত্রণালয়ে অন্য পদে তিনি চাকরিই বা করছেন কিভাবে? সতর্কীকরণ নোটিশটিতে ওই নিরাপত্তা প্রহরীর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নোট অনুমোদনের কথা বলা হলেও তার প্রমাণও পাওয়া যায় নি। ধারণা করা হচ্ছে, মো. সাখাওয়াত হোসেন নিরপরাধ হলেও, রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের অপরাধ আড়াল করতেই ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে তাকে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে সময় সংবাদ জানতে পেরেছে, সামিনা নাজ কথায় কথায় লিখিতভাবে বরখাস্ত করেন অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অনেক সময় তাদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনও চালান তিনি। তার নির্যাতন এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে এখন কোনো কর্মকর্তাই এই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কাজ করতে রাজী হচ্ছেন না। বর্তমানে ভিয়েতনামের ওই দূতাবাসে নতুন যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়িত হয়েছিলেন তারা হ্যানয় থেকে বদলী হবার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে আবেদন করছেন বলে জানা গেছে। নতুন কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকেই সামিনা নাজের সঙ্গে কাজ করতে রাজী করাতে পারছে না মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, কর্মচারীরা একযোগে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সামিনা নাজের সঙ্গে কেউ কাজ করবেন না। এতে বিব্রতবোধ করছে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ।
এদিকে, রাষ্ট্রদূতের আচরণে এবং যথোপযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে উক্ত মিশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে বলে জানা গেছে। ভিয়েতনামে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা দূতাবাসের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লাওসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেখাশোনার দায়িত্ব হ্যানয় দূতাবাসের। কিন্তু হ্যানয় দূতাবাসের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে এই প্রবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন যাতে হ্যানয়ের পরিবর্তে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদের সেবা দেয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে বলেন, রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ সরকারি নিয়মকানুন তো দূরের কথা, মিশনপ্রধান হিসেবে সহকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ সৌজন্যবোধও বজায় রাখছেন না, যা সহকর্মী হিসেবে আমাদের লজ্জিত করে।
জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বর্তমানে টেলিফোন এবং এমনকি ফেসবুকে জুনিয়র কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাচ্ছেন তার মিশনে পোস্টিং নিতে, যদিও জুনিয়র কর্মকর্তারা বিনীতভাবে বিভিন্ন অজুহাতে তার এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করছেন। এসব কর্মকাণ্ডকে হাস্যকর ও অপেশাদারমূলক বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা।
এসব অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে এক ভারতীয় তরুণীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ওঠে আসামে নিয়োজিত অ্যাসিস্টেন্ট হাই কমিশনার কাজী মুনতাসির মোর্শেদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত এই কর্মকর্তার অপরাধ ধামাচাপা দিতে রাতারাতি তদন্ত কমিটি পুনর্গঠনও করা হয়। সৌজন্যে : সময়টিভি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন