এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : ঢাকায় জটলামুক্ত চলবে ৩ লাখ যান
রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে মানুষ। বাড়ছে যানবাহন। নগরজীবনে নিত্যসঙ্গী তাই যানজট। হবে না কেন? দেড়-দুই কোটি মানুষের শহরে প্রধান সড়ক যে মাত্র চারখানা! তাই সড়ক নিয়ে নানামুখী প্রকল্পের পরও কমছে না যানজট। তবে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন চালু হবে তখন যানজট কমে আসবে এই আশা অনায়াসে করতে পারে নগরবাসী। কারণ এই উড়াল সড়কে তিন লাখ যানবাহন জটলা ছাড়াই চলার সক্ষমতা থাকছে, এই তথ্য জানিয়েছে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিং, পিলার, ক্রসবিম বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে উড়ালসড়ক প্রকল্পটি কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রায় ৪৭ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ে তিন ভাগে বিভক্ত। বিমানবন্দর থেকে বনানী, বনানী থেকে মগবাজার এবং মগবাজার থেকে কুতুবখালী। এ প্রকল্প বস্তবায়ন হলে শহরের বিভিন্ন অংশে যান চলাচল করতে পারবে দ্রুত।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থের জোগান পেতে সময় লেগেছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে সময় লেগেছে। সব সংকট কাটিয়ে এ বছর খুবই দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। প্রয়োজনীয় ২২০ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ। পিলার স্থাপনও হয়ে গেছে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে যানবাহনগুলো ঢাকার উত্তর অংশ থেকে নির্বিঘ্নে মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে যাতায়াত করতে পারবে।
যান চলাচলে গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট সহনীয় রাখতেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এই প্রকল্প।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) সূত্র থেকে জানা গেছে, পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোলপ্লাজা, এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপর। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার জোগান দিচ্ছে। বাকি টাকা বিনিয়োগ করবে ইতালি-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি। নির্মাণকালীন তিন বছরসহ মোট ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে নেবে থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে ইতালি-থাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন।
এদিকে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক কাজ এগিয়ে নিতে আরেকটি প্রকল্প (সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) হাতে নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হবে আরো ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে ইতালি-থাইয়ের সঙ্গে প্রথম চুক্তি করে সেতু বিভাগ। সেই বছরের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে। পরে নকশা বদল ও অন্যান্য কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশোধিত চুক্তি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক কাজী মুহম্মদ ফেরদৌস বলেন, ‘কাজ পুরোদমে চলছে। এভাবে চললে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে পারব। আমাদের প্রকল্প শেষ হওয়ার সময় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।’
তিনি আরো জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে রাজধানীর যানজট কমে যাবে। আশুলিয়ার ইপিজেড থেকে পণ্যবাহী গাড়ি সহজেই চট্টগ্রাম যেতে পারবে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টের যানজট এড়িয়ে পৌঁছানো যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে। পাইলিং, পিলার, ক্রসবিম বসানোর কাজ সমানতালে এগিয়ে চলছে। এতদিন মাটির নিচে কাজ করা হয়েছে। এখন দৃশ্যমান হবে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ।
দূরপাল্লার গাড়িসহ সব ধরনের রুটের গাড়ি চলবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আমরা আশা করছি এটি চালু হলে প্রতিদিন এর ওপর দিয়ে ৩৫-৪০ হাজার গাড়ি চলবে। তবে দিনে তিন লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারার সক্ষমতা থাকবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের।’-এই সময়’র সৌজন্যে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন