এসএসসি-এইচএসসি পাস ফেল অ্যাসাইনমেন্টেই
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখার চেষ্টা করছে সরকার। টেলিভিশন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাঠ সম্প্রচারের উদ্যোগে শহরকেন্দ্রিক ইতিবাচক ফল এলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এর সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। তাই শতভাগ শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ায় যুক্ত রাখার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি চালু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মহামারীর কারণে গতানুগতিক পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ না করায় এখন নির্ভর করতে হচ্ছে এই অ্যাসাইনমেন্টের ওপর। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর এই অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হচ্ছে, যার ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পাস-ফেলের ভাগ্য। সুতরাং যারা এই অ্যাসাইনমেন্ট যথাযথ অনুসরণ চর্চা করবে, তারাই পাবে সর্বোচ্চ জিপিএ নম্বর। শিক্ষা প্রশাসন থেকেও অ্যাসাইনমেন্টের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট ঠিকঠাকভাবে করলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভালো হবে। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শেষে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে সব বিষয়ের ফল দেওয়া হবে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’য়ের মাধ্যমে। আর পরীক্ষা নেওয়া গেলে নৈর্বাচনিক বাদে বাকি সব বিষয়ে গ্রেড দেওয়া হবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে।
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রবিবার এই পরীক্ষার্থীদের চতুর্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। গতকাল এই অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়। এতে লকডাউন এলাকার শিক্ষার্থীদের সুবিধাজনক সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ ও জমা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
এর আগে পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে এসএসসির ৬০ ও এইচএসসিতে ৮৪ দিনের শ্রেণি কার্যক্রম শেষে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল শিক্ষা প্রশাসনের। কিন্তু বর্তমান অতিমারী পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে ফল অর্জনের বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘এসএসসি-এইচএসসিতে প্রশ্ন, নম্বর ও সময়ে পরিবর্তন এনে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্যে আটটির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন হয়তো ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে তিনটি বা চারটির উত্তর দিতে বলা হতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে। সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা সব বিষয়ে না নিয়ে কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ে নেওয়া হবে। এতে পরীক্ষা নেওয়ার সময় যেমন অর্ধেক কমবে, তেমনি প্রতি বিষয়ের মোট নম্বরও কমে যাবে। একই সঙ্গে প্রশ্নপত্র থেকে উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বাছাইয়ে বেশি সুযোগ পাবে।’ তিনি বলেন, করোনো পরিস্থিতি অনুকূলে এলে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আলোকে গ্রুপভিত্তিক শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষার সময় ও পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।
বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, এসএসসি, এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেএসসি, জেডিসি, সমমান পরীক্ষায় আবশ্যিক বিষয়গুলো যেমন- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি ও ধর্মে অধ্যয়ন করেছে। এই বিষয়গুলো জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়েছে। এসএসসি বা সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গ্রুপভিত্তিক সব বিষয় আগে বোর্ডগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করেনি। সে কারণে এই বিষয়গুলোর মূল্যায়ন আবশ্যক। তা ছাড়া আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসএসসি, এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ে প্রদান করা সম্ভব। এ ছাড়া উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রুপভিত্তিক বিষয়গুলোর মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে কারণেও গ্রুপভিত্তিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করা হবে। এই বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি শেষ করা হবে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে। এর মধ্যে এসএসসি ও সমমানের মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি সম্পন্ন হবে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে মোট ৩০টি। এগুলো শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে অনুসরণ ও চর্চা করলে তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সম্পন্ন হবে। এর ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়নও হবে। এসব অ্যাসাইনমেন্ট ভালো করে করতে পারলে শিক্ষার্থী ভালো করে পরীক্ষা দিতে এবং ভালো ফল করতে পারবে।
এদিকে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাস না দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। সে ক্ষেত্রে রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ তাদের। এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুলতে পারলে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কোনোভাবেই অটোপাসের ঘোষণা দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বিষয় কমিয়ে, পরীক্ষার মোট নম্বর ও সময় কমিয়ে প্রতি বিষয়ের জন্য ৫০ নম্বর নির্ধারণ করে এবং কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করে স্ব-স্ব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নিতে হবে।-আমাদের সময়
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন