এ কোন রবি ঠাকুর!

কবিগুরু রবিঠাকুরের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে বসে আছেন তিনি। নিজের বাড়িতে তিনি বসে থাকবেন এটিই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বলি- ঘটনাটি ২৪২৫ সালের ২২ শ্রাবণের; তবে ভ্রু কুঁচকে কথাটা আবার শুনতে চাইবেন শ্রোতারা।

হ্যাঁ, গত ২২ শ্রাবণের কাকডাকা ভোরে রবিঠাকুরকে আনমনা বসে থাকতে দেখে অনেকেই বিস্মিত, অপলক চেয়েছিলেন তার দিকে।

মাথায় ঢেউ খেলানো কাঁচাপাকা চুল। সঙ্গে লম্বা দাড়ি। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ওই ব্যক্তি যে অবিকল কবিগুরু!

ব্যাপারটি বুঝতে পেরে রহস্যের উন্মোচন করলেন ‘কবিগুরু’ নিজেই।

তিনি হেসে বললেন, ‘আমি একজন রবীন্দ্রভক্ত। নাম সোমনাথ ভদ্র। অনেকেই বলেন- আমি নাকি দেখতে কবিগুরুর মতো।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে থাকেন এ কবিগুরুরূপী সোমনাথ বাবু। সেখানেই তার অফিস।

২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবণ এ দুদিন অফিসে যান না বলে জানান রবীন্দ্রভক্ত সোমনাথ বাবু। তিনি জোর গলায় বললেন, ‘চাকরি গেলে যাক। এ দুদিন আমার কবিগুরুর জন্য রাখা।’

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সোমনাথ বাবুকে প্রায়শই কলকাতার রাস্তায়, ট্রাম, বাস ও ট্রেনে দেখতে পাওয়া যায়।

চেনা-অচেনা সবাই দ্বিতীয়বার হলেও তার দিকে তাকায় বলে তিনি জানান। রবিঠাকুরের মতো দেখতে বলে তিনি নাকি অনেক সুবিধাও পান। মানুষ স্বেচ্ছায় এসে তাকে সাহায্য করেন।

আটান্ন বছরে পা দিয়েছেন সোমনাথ বাবু। চেহারায় তাই মধ্যবয়স্ক রবিঠাকুর ফুটে উঠেছে।

কেমন রবীন্দ্রভক্ত তা জানালেন সোমনাথ নিজেই- ‘ছোটবেলা থেকেই আমি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসি। ওর গান আমায় চুম্বকের মতো টানে।’

দীর্ঘদিন ধরে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সদস্য তিনি। সেখানে তাকে মজা করে ‘কালো রবীন্দ্রনাথ’ ডাকে সবাই।

রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সোসাইটির এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই যে সেখানে সোমনাথ আসেননি। কাকতালীয়ভাবে ওর চেহারাটা কবিগুরুর সঙ্গে মিলে গেছে। রবীন্দ্রসংগীতের প্রায় সব গানই তার মুখস্ত।’

সিদ্ধার্থ বাবু আরও বলেন, অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের সোমনাথ বাবুকে দেখতে পেলেই তাকে ক্যামেরাবন্দি করেন জোড়াসাঁকোয় আসা বিদেশিরা।

স্থানীয়রা এখন সোমনাথ বাবুর আসল নামটা প্রায় ভুলতে বসেছেন। ‘কালো রবীন্দ্রনাথ’ নামে তিনি এখন বেশ সমাদৃত।

সম্প্রতি রবীন্দ্রভক্ত এ কালো রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘এ কোন রবি’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার