ঐক্যফ্রন্ট কেন নির্বাচনের তফসিল পেছাতে মরিয়া?
নির্বাচনের তফসিল পেছাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমবাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন ‘‘ঐক্যফ্রন্টের দাবি মানার আগে তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করা হবে৷”
ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকিও এসেছে৷ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র এবং বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘‘আগামীকাল
(৭ নভেম্বর) সংলাপ হবে৷ আমরা শান্তি চাই৷ কিন্তু সংলাপ নিয়ে কোনো নাটক করলে হবে না৷”
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশেকোনো নির্বাচন হবে না৷ আমরা দাবি আদায় করবো৷”
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘‘দেশের মালিক কোনো মহারানি-মহারাজা নন৷ এই দেশের মালিক জনগণ৷ জনগণের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপসহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাবো৷”
তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কথার এক পয়সার দামও নেই৷ সেটা গত ৫ বছরে প্রমাণিত হয়েছে৷ সংবিধান ষোল আনা উপেক্ষা করা হয়েছে৷”
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা দেশের মালিক হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকবো৷ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেবো৷ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে৷ ভোটকেন্দ্রে পাহারা দিতে হবে৷”
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, (৭ নভেম্বর) যে সংলাপ হবে, সে সংলাপে শুধু মুখে নয়, লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে৷
কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টে যেগ দেয়ার পর মঙ্গলবারই প্রথম সমাবেশে বক্তব্য দেন৷ তিনি বলেন,‘‘বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা রাজাকারের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছে৷ এই অভিযোগ সত্য নয়৷ আওয়ামী লীগই প্রথম রাজাকার নুরুর গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে৷ রাজাকার মহিউদ্দিনের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ আশিকুর ররহমানের গাড়িতেও আওয়ামী লীগ পতাকা তুলে দিয়েছে৷”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমি বিএনপিতে যোগ দেইনি৷ ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি৷ জিততে হলে জয় আপনাদের হাতে৷ হারতে চাইলেও তা আপনাদের হাতে৷ শেখ হাসিনা কিছু করতে পারবেন না৷ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে ভুলে হিমাদ্রির মতো সোজা হয়ে দাঁড়ান৷”
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকার, তথা আওয়ামী লীগের প্রথম সংলাপ হয় গত বৃহস্পতিবার৷ ওই সংলাপের পর একটি সিদ্ধান্তে আসার জন্য ছোট আকারে আরেকটি সংলাপের কথা বলা হয়েছিল৷ সেই সংলাপ হবে বুধবার ( ৭ নভেম্বর)৷ জানাগেছে, সংবিধানের মধ্যে থেকেই কিভাবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা যায়, তার একটি ফর্মূলা বের করেছে ঐক্যফ্রন্ট৷ সেটাই বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা তুলে ধরবে৷ আর তারা মনে করে, এই সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের তিন মাসে নির্বাচন হলেই ওই ফর্মূলা কাজে আসবে৷ এ কারণে তারা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয়ার পরও সোমবার কমিশনের সঙ্গে দেখা করে সংলাপ শেষ না হওয়ার আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা না করার দাবি জানিয়েছে৷ মঙ্গলবারের সমাবেশেও তাদের এই দাবিটিই মূখ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন বক্তার মুখে৷ কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার মঙ্গলবারও বলেছেন, সব দল এক না হলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়া সম্ভব নয়৷ নির্ধারিত দিনেই ( ৮ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা করা হবে৷ এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে পরে ওইদিনই সংবাদ সম্মেলন করবেন৷ সেখানে তিনি কী বলেন সবাই এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায়৷
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি৷ আর সংসদ সদস্যরা শপথ নেন ৯ জানুয়ারি৷ ২৯ জানুয়ারি সংসদের অখিবেশন বসে৷ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের তফসিল না পেছানো হলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হবে৷ আমরা চাই এই সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচন হোক৷ সংসদ রেখে এবং নির্বাচিত সরকার রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ সরকারের মেয়াদের পরবর্তী তিন মাসে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সবাই হবে অনির্বাচিত৷ তখন সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব৷ সেই সরকারে সব দল থেকেই প্রতিনিধি থাকতে পারবেন৷ এসব কারণেই আমরা নির্বাচনের তফসিল এখন ঘোষনা না করার দাবি করছি৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, দু-একটি সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না৷ আরো আলেচনা প্রয়োজন হবে৷ তাই সংলাপের মাধ্যমে একটি সমঝোতামূলক ফল আসার আগ পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা হলে তা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না৷”
আর ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের তো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সময় দিতে হবে৷ আমরা এতদিন কোনো মিছিল মিটিং করতে পারিনি৷ আমাদের কথা তো জনগণের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে৷ তাই আমরা তফসিল পেছানোর দাবি করছি৷ আর জানুয়ারি পর্যন্ত তো সময় আছে৷ তিন সপ্তাহ আগে তফসিল ঘোষণা করলেই হবে৷”
তবে আওয়ামী লীগ আগামী ৯ নভেম্বর শুক্রবার থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে ফরম বিরতণ শুরু করবে৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়৷ কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ তার সরকারের মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন করবে৷ মেয়াদের পরবর্তী তিন মাসে নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই৷ তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে৷ তারা কোনো ঝুঁকির মধ্যে যেতে চায় না৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর চার জন টেকনোক্রেট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন৷ তাঁরা পদত্যাগ শুরুও করেছেন৷ তাঁরা হলেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার৷ জানা গেছে, যদি বিরোধীরা রাজি হন, তাহলে তাদের মধ্য থেকে চারজন মন্ত্রী নিতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কিন্তু সরকারে আর কোনো পরিবর্তন আনার চিন্তা নেই৷
-ডয়চে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন