সাতক্ষীরায়

ওয়াশরুমে ঢুকে ছাত্রীদের আতঙ্কিত করলেন শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ

সাতক্ষীরার নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষক মেয়েদের ওয়াশরুমে প্রবেশ করে ছাত্রীদের ভয়ভীতির মধ্যে ফেলে দেন।

ঘটনার পর মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বিরতির পর শেষ ক্লাস শেষে মেয়েরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে মেয়েদের বাইরে আসতে বলেন। একে একে মেয়েরা বেরিয়ে এলেও, ভেতরে থাকা এক ছাত্রী যখন দরজা খুলে বের হয়, তখন স্যারকে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগেও সিরাজুল ইসলাম ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। কখনও তাদের গায়ে হাত দিয়ে মেরেছেন, আবার কখনও অশালীনভাবে কথা বলেছেন—যা ছাত্রীদের মধ্যে ভয় ও অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, “সিরাজুল স্যার প্রায়ই ওয়াশব্লকে যান চুল ঠিক করতে। তিনি একজন পুরুষ শিক্ষক হয়েও মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে মারেন, যা একেবারেই অনৈতিক।”

তারা আরও জানান, সপ্তম শ্রেণির ছোট ছাত্রীদের অনুরোধেই তারা বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। “আমরা তো শিগগিরই স্কুল ছাড়ব, কিন্তু ওরা তো থাকবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে আরও ভয়ানক কিছু হতে পারে,” বলেন এক শিক্ষার্থী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম ইংরেজি শিক্ষক হলেও বিদ্যালয়ের বাইরে তাঁর একাধিক কোচিং ব্যাচ রয়েছে। বিদ্যালয়ের ভেতরেও প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের কোচিং সেন্টারে পাঠানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ আছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এটা স্কুলের বিষয়, আপনি হেড স্যারের সঙ্গে কথা বলুন। আমি অসুস্থ ছিলাম, এজন্য ওখানে গিয়েছিলাম।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজী বলেন, “এর আগে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তখনই আমি সবাইকে কোচিং করতে নিষেধ করি। আজ শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি, প্রয়োজনে ম্যানেজিং কমিটিকেও জানানো হবে।”

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মুহা. আবুল খায়ের বলেন, “আমার অধীনে সাতক্ষীরায় ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক নবারুণে যদি সপ্তাহে একবার করে যেতে হয়, তাহলে অন্যগুলো চালাবো কিভাবে? সভাপতিকে বলেন, তারপর না হলে আমরা দেখবো।”

অভিভাবকরা বলছেন, একজন পুরুষ শিক্ষক হিসেবে এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য ও লজ্জাজনক। তাঁরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।