কক্সবাজারে মামলা মেয়রের বিরুদ্ধে, সেবা বন্ধ পৌরসভার!
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2021/11/Capture-862x450.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে হত্যা চেষ্টা মামলা হওয়ায় সকল ধরণের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দিয়েছে কক্সবাজার পৌরসভা। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে সেবা নিতে আসা পৌরবাসী।
কক্সবাজার পৌরসভা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মেয়র মুজিবুরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভা কোন ধরণের নাগরিক সেবা দিবে না।
সোমবার (১ নভেম্বর) এক জরুরী সভায় পৌর পরিষদ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
ওই জরুরী সভার সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
সভার সিদ্ধান্ত মতে, মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সেই মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, চলমান সড়ক উন্নয়ন কাজ এবং জাতীয়তা-জন্ম মৃত্যু সনদসহ পৌরসভার সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন কাউন্সিলরবৃন্দ।
ঘোষণা মতে, সবাই পৌরসভায় এলেও কোন ধরণের সেবা দেয়া থেকে বিরত রয়েছে কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মজীবীরা।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরজমিনে কক্সবাজার পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। ভেতরে সেবা প্রার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এ সময় সেবা নিতে আসা আরাফা বেগম বলেন, তিনমাসেরও আগে মেয়ের জন্মনিবন্ধনের ভুল সংশোধন করতে দিয়েছি। আজকাল বলে এখনো দেয়নি। সোমবার অবশ্যই দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ তো ভেতরেই ঢুকতে দিচ্ছে না। অথচ স্কুলে জমা দেওয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার।
অপর একজন বলেন, মামলা করেছে যুবলীগ নেতার ভাই। মামলা হয়েছে ব্যক্তি মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এখানে কোন যুক্তিতে পৌর পরিষদের সেবা বন্ধ করেছে সেটাই বুঝতে পারছি না। আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছি সেবার জন্য। এখন দেখছি ভোগান্তি তৈরি করা পৌর পরিষদের কাজ।
পৌর পরিষদের সেবা বন্ধের বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ২ ও শহর আওয়ামীলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, মেয়র মুজিব জনপ্রিয় নেতা। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছে। মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করা হলে মেয়র মুজিবুরের নির্দেশ পেলেই সেবা কার্যক্রম পূণরায় চালু করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজারের উপসচিব (ডিডিএলজি) শ্রাবস্তী রায় বলেন, ‘নাগরিক সেবা যে বন্ধ আমি জানতাম না। এটি কোনভাবেই করতে পারে না পৌরসভা।’
সেবা বন্ধের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মেয়র মুজিবুর রহমান ফোন না ধরায় বক্তব্য জানা যায়নি।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম ফোন ধরলেও নাগরিক সেবা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯ টায় শহরের সুগান্ধা পয়েন্টে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মোনাফ সিকদারকে গুলি করা হয়। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওই ঘটনায় আহত মোনাফ সিকদারের ভাই শাহাজাহান সিকদার বাদী হয়ে রবিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, তার ব্যক্তিগত সহকারী এবি ছিদ্দিক খোকন এবং কক্সবাজার সদর রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ছোট বোন ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এতে আরও ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। মামলাটি রুজু হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর পৌরসভার গাড়ি ব্যবহার করে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় পৌর পরিষদ। রোববার রাত ১০ টা পর্যন্ত পৌরসভার কাউন্সিলর, সুইপার, ঝাড়ুদারসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারী সড়কে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে নাগরিক সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তারা রাস্তা থেকে সরে যায়।
মেয়রের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে কক্সবাজার শহরে বিক্ষোভ
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুনাফ সিকদারকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে রবিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহর জুড়ে অবরোধ-বিক্ষোভ করেছে মেয়র অনুসারীরা।
জানা যায়, গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় মার্কেটের সামনে আড্ডারত মুনাফ সিকদারকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন গুলিবিদ্ধ মুনাফ সিকদারের বড় ভাই মো. শাহজাহান সিকদার।
এ ঘটনা জানাজানি হবার পর, কক্সবাজার শহর জুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রচেষ্টা করে মুজিব অনুসারীরা। বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরসভার কর্মচারী, বিতর্কিত কাউন্সিলর, সুইপাররা মাঠে নেমে সড়কের মাথায় মাথায় চলাচল প্রতিরোধ করে। যান চলাচল প্রতিহত করতে ব্যবহার করা হয় পৌরসভার ময়লা পরিবহণে ব্যবহার করা পিকআপ, মিনিট্রাক, খনন কাজে ব্যবহার করা স্কেবেটরসহ সব ধরণের যানবাহন। এসব যানবাহন শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মাথায় আড়াআড়ি করে রেখে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়। শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের সড়কগুলো এবং পৌরসভার অফিসের আশপাশের সড়কগুলো আটকে দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মেয়রের পক্ষে প্রতিরোধ সভায় বক্তব্য দিতে দেখা গেছে বিতর্কিত ও জেল ফেরত কয়েকজন কাউন্সিলর, মানবপাচার মামলার আসামী, চিহ্নিত টোকাই, চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি, ভূমিদস্যুসহ সুবিধাভোগী মহল। সভায় তাদের বলতে শোনা যায়, হত্যা প্রচেষ্টা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ-বিক্ষোভ চলমান থাকবে। বন্ধ থাকবে পৌরসভার সেবা কার্যক্রম ও দোকানপাট।
কক্সবাজার জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল জরুরি বিজ্ঞপ্তি বলে তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, ”কক্সবাজার পৌর মেয়র, ব্যবসায়ীদের বিপদে-আপদে যিনি এগিয়ে আসেন, জননন্দিত জননেতা জনাব মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে কক্সবাজার শহরের সকল দোকানপাট পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার জন্য সকল ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ রহিল।”
এ ঘোষণার দেখার পর কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সিনিয়র নেতা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝিকে পূঁজি করে জামায়াত-বিএনপি সব সময় সুযোগ নেয়, এটা তারই প্রমাণ। দোকান মালিক সমিতির নামে মুকুলরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সবসময় সন্তর্পণে চলে সেটাই প্রতীয়মান হলো।
তবে, এসব ঘটনার সাথে তার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমি কাউকে প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করতে বলিনি। কিন্তু ভালোবেসে হয়তো আমার নেতা-কর্মীরা মাঠে নামতে পারে। এটা তাদের অধিকার, ভালোবাসা। আমার স্পষ্ট ঘোষণা হলো, আমাকে মিথ্যা ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে মেয়র মুজিবের পক্ষে করা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচী ৩ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা যায়। এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় জেলা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের আশ্বাসে বিক্ষোভ কর্মসূচী প্রত্যাহার হয়েছে।
উজ্জ্বল বলেন, মুজিবুর রহমানের নামে হয়রানিমূলক মামলা করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা থেকে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ শুরু করে। এতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শহরে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলাপ হয়েছে। পরে জেলা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় মার্কেটের সামনে আড্ডারত মুনাফ সিকদারকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মুনাফ সিকদারের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত মুনাফ সিকদার (৩২) শহরের পেশকারপাড়া এলাকার শাহাব উদ্দিন শিকদারের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং শহর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। এসময় কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর ছনখোলা এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. তারেক (২২) নামের এক পথচারীও গুলিবিদ্ধ হন।
গুলিবিদ্ধ মোনাফ শিকদার একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তাকে গুলি করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা গুলি করার সময় আমাকে বলছে, মুজিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগছো? এ বলে পেছন থেকে গুলি করে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে ৯ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন গুলিবিদ্ধ মুনাফ সিকদারের বড় ভাই মো. শাহজাহান সিকদার।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন