কঙ্গনাকে যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন হৃতিক
গত দুই বছর ধরেই বাকবিতণ্ডা চলছে বলিউডের দুই তারকা হৃতিক রোশন ও কঙ্গনা রানাউতের মধ্যে। সে দ্বন্দ্বের আগুনে সম্প্রতি আবারো ঘি ঢেলেছেন কঙ্গনা। ‘সিমরান’ চলচ্চিত্রের প্রচার করার সময় হিন্দি টিভি চ্যানেলের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মানসিক হয়রানির জন্য হৃতিক রোশন ও তার বাবা রাকেশ রোশনের উচিত আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া।’
এ ছাড়া আরেক ভারতীয় হিন্দি চ্যানেল রিপাবলিক টিভি গত এপ্রিলে হৃতিকের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা ২৯ পৃষ্ঠার অভিযোগ প্রকাশ করেছে। যেখানে যৌন হয়রানিমূলক ই-মেইলও পাওয়া গেছে। তবে যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন এত দিন। অবশেষে মুখ খুলেছেন হৃতিক রোশন। ডিএনএ ইন্ডিয়ার খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে দেওয়া বিরাট এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন হৃতিক।
ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে হৃতিক লিখেন, “আমি সব সময় সেই পথ বেছে নিয়েছি, যে পথে রয়েছে সৃজনশীলতা, উৎপাদনশীলতা এবং গঠনমূলক কাজ অথবা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত যেকোনো কিছুকেই আমি সব সময় অগ্রাধিকার দিয়েছি। তাঁর (কঙ্গনা) সঙ্গে বিতর্ককে আমি সব সময় উপেক্ষা করেছি, পাশ কাটিয়ে গিয়েছি এবং একে আমার মনোযোগ বিনষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো অপ্রত্যাশিত অবস্থাকে দমিয়ে রাখার জন্য নিজের সম্মান বজায় রেখে উপেক্ষা, প্রশ্রয় না দেওয়াটাই সঠিক রাস্তা। কিন্তু স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ছোটখাটো বিষয়গুলো আমল না দিলে যেমন তা মারাত্মক আকার ধারণ করে, তেমনি এ ঘটনাও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
গণমাধ্যমও বিষয়টিকে ছাড়ছে না। গণমাধ্যমের তৈরি করা এই সার্কাসে নিজেকে সংযুক্ত করে আমার চরিত্রকে যাচাই করার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না। কারণ, এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনো দিনও ছিল না। আমি একটি নোংরা খেলার শিকার হয়েছি মাত্র। সত্য কথা হচ্ছে, আমি কখনো ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করিনি। হ্যাঁ, আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি; কিন্তু একান্তে কোনো সাক্ষাৎ হয়নি। এটাই সত্য।
দয়া করে একটু বুঝতে চেষ্টা করুন, আমি কোনো প্রেমের সম্পর্কের অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছি না। অথবা নিজেকে ভালো মানুষ প্রমাণ করার শিশুসুলভ আচরণও করছি না। আমার ভুলগুলো সম্পর্কে আমি যথেষ্ট সজাগ। আমি একজন মানুষ।
দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, খুব অল্প গণমাধ্যম প্রকৃত ঘটনার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা আমার জন্য কঠিন এক সত্য।
যদি লোকেরা মিথ্যাটাকে নিয়ে সুখী হয়, কারণ এটা হয়তো পৃথিবীর প্রচলিত নিয়মকে হুমকির মুখে ফেলে না, যেখানে নারী সব সময় ঘটনার শিকার হবে এবং পুরুষকে তাঁর দায়ভার নিতে হবে, তাহলে এখানে আমার কিছুই বলার নেই।
কয়েক শতক ধরেই পুরুষের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারীরা এবং এটা প্রায়ই পীড়া দেয় যে কীভাবে পুরুষের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। আমি মনে করি, সেসব পুরুষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এই যুক্তিতে সব মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। এটাও তো হতে পারে যে একজন পুরুষ আসলে কোনো দোষ করেনি এবং মেয়েটি মিথ্যা কথা বলছে। এ ঘটনার কারণেই দুই তারকার সাত বছরের সংসার সম্পর্ক ভেঙে গেছে, যার কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই।
কোনো প্রমাণ নেই, পাপারাজ্জির কোনো ছবি নেই, কোনো সাক্ষী নেই, এমনকি কোনো স্মারকও নেই। শুধু ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের একটি সেলফি কেন্দ্র করে সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। একটা সেলফি কোনো সম্পর্কে জড়ানোর প্রমাণ হতে পারে না। তবুও এখনো আমরা তাঁকেই বিশ্বাস করে চলেছি, কারণ, আমাদের মনে একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে একটা মেয়ে মিথ্যা কেন বলবে।
তথাকথিত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা এই সেলফিটি আসলে গণমাধ্যম কর্তৃক ফটোশপে করা হয়েছে। যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এবং পরেরদিন যা আমার বন্ধু এবং আমার প্রাক্তন স্ত্রীর কাছেও পৌঁছে গিয়েছে।
এই প্রশ্নগুলো কারোরই কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমরা নারীকে রক্ষা করতে শিখেছি, যেটা আমাদের করা উচিত। আমিও এই চিন্তা মাথায় নিয়ে বড় হয়েছি। আমার অভিভাবক ও আমার জীবনে আসা চমৎকার নারীটিও এ ব্যাপারে সব সময় সমর্থন দিয়েছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার সন্তানদেরও আমি একই শিক্ষা দিয়েছি তারাও যেন নারীদের সুরক্ষার জন্য তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করে। সব সময়।
আমি নাকি তাঁকে প্রায় ৩০০০ মেইল পাঠিয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যেই সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট তা প্রমাণ করবে। এ কারণে আমি আমার ল্যাপটপ, ফোনসহ সব ডিভাইস তাদের কাছে জমা দিয়েছি। অন্যপক্ষ কিন্তু তাদের ডিভাইস জমা দেয়নি। তাদের বলতে চাই, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
এটা কোনো প্রেমের গুঞ্জন বা গুজব নয়। আমি আবারও বলছি, এটি প্রেমের গুঞ্জন বা গুজব নয়। আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যেন আগে থেকেই এ ঘটনাকে নিয়ে তাঁরা কোনো রায় না দিয়ে দেন। একটি সেকেন্ডের জন্য হলেও দেখুন সত্যটা কী।
চার বছর ধরে আমি এই সমস্যাটাতে ভুগছি এবং নারীদের প্রতি সমাজের দুর্বলতা থেকে নিজের আত্মরক্ষা করতে গিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।
আমি রাগান্বিত নই। আমি আমার জীবনে রাগকে কখনো প্রাধান্য দিই না। আমি কখনো আমার জীবনে কোনো পুরুষ বা নারীর সঙ্গে একটি লড়াইও করিনি। এমনকি আমার বিচ্ছেদেও কোনো বিবাদ বা লড়াই হয়নি। আমি এবং আমার আশেপাশের সবাই শান্তি পছন্দ করি।
আমি এখানে নিজেকে বিচার করতি আসিনি। কিন্তু এখনই সত্য প্রকাশ করে প্রতিবাদ করার উপযুক্ত সময়। কারণ সত্য এখানে সামাজিক উপলব্ধির কাছে হেরে যাচ্ছে। সভ্যতা সত্য প্রকাশ না পাওয়ার রোগে ধুঁকছে। আর এ ঘটনায় আমার কাছের মানুষেরা ভুগছে, আমার পরিবার ভুগছে। আমার সন্তানরাও একই ঘটনায় ভুগছে।”
হৃতিকের এমন আত্মপক্ষ সমর্থনের পর কঙ্গনার অবশ্য কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন