কমেছে দারিদ্র্যের হার, বেড়েছে বৈষম্য

দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও বেড়েছে বৈষম্যের হার। গত ছয় বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে বৈষম্যের হার বেড়েছে। এর

মানে ধনী ব্যক্তির আয়ের হার যে হারে বেড়েছে, গরিব মানুষের আয়ের হার সে তুলনায় বাড়েনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে ১২ হাজার খানার তথ্য নেয়া হয়েছিল। এবার ২০১৬ সালে নমুনা দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৬ হাজার খানার ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এই জরিপ হয়। এই জরিপে খানার আয়-ব্যয়, ভোগ, পুষ্টিমান, জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত তথ্য, দারিদ্র্য হার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।

জরিপ অনুসারে, ২০১০ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে সালের হিসাবে ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশে। এর মানে ছয় বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭.২ শতাংশ। তবে দারিদ্র্য কমার এই হার আগের ছয় বছরের চেয়ে কম।

অন্যদিকে দারিদ্র্যের হার কমলেও বেড়েছে আয় বৈষম্য। বৈষম্য নিরূপণে সমাদৃত মানদণ্ড গিনি সূচক নামে পরিচিত। নিয়মানুসারে গিনি সূচক শূন্য হলে কোনো

বৈষম্য নেই বলে ধরা হয়। এক কে বলা হয় সর্বোচ্চ বৈষম্য। তার মানে শূন্য থেকে এর হার যত বাড়বে বৈষম্যও তত বাড়বে।

বিবিএসের জরিপ অনুসারে ২০১০ সালে গিনি সূচকে বৈষম্যের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। আর ২০১৬ সালে সেই বৈষম্যের হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক

৪৮৩।

জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্য ও হতদরিদ্রের সংখ্যাও কমেছে। আমাদের জন্য একটি ভালো সংবাদ। যেভাবে দারিদ্র্যের হার কমছে এ হিসাবে আমরা বলতে পারি ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না।

বৈষম্য বিষয়ে তিনি বলেন, বৈষম্য বেড়েছে ঠিক আছে, কিন্তু আমরা অন্য পদ্ধতিকে এই বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে আনবো। যারা আয় বেশি করবে, তারা করও বেশি দেবে। এভাবে এ বৈষম্য কমিয়ে আনা যাবে।

এসময় তিনি যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তাদের জাকাত দিতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, সবাই জাকাত দিতে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমবে।

পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার ও লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে দারিদ্র্য কমেছে এটা একটা ভালো সংবাদ। এই দারিদ্র্য কমার সূচকে হতদরিদ্রও রয়েছে। কিন্তু এই জরিপে কিছু মন্দ দিক উঠে এসেছে। এর একটি হলে আয় বৈষম্য বেড়েছে। এর মানে হলে দরিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বাড়ছে। প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সেটা দারিদ্র্য বান্ধব প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। মানুষের কর্মসংস্থান বান্ধব প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না।

৬২টি প্রশ্নের উত্তরে মানুষের আয়, ব্যয়, ভোগ, স্বাস্থ্য, প্রবাস আয়সহ অন্যান্য তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক দীপঙ্কর রায়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, জরিপটি এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) পূরণে কাজে আসবে। এই জরিপ আগের চেয়ে নির্ভরযোগ্য বলা যায়। কারণ জরিপে নমুনার সংখ্যা বেড়েছে। বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে সেটি কমে আসে ৩১.৫ শতাংশে। সে হিসাবে ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৮.৫ শতাংশ।

প্রতিবছর দারিদ্র্যের হার কমেছে ১.৭ শতাংশ হারে। আর ২০১১ থেকে ২০১৬ এই সময়ে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭.২ শতাংশ। প্রতিবছর কমেছে ১.২ শতাংশ হারে।

খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বলছে, দেশে এখন অতি দারিদ্র্যের হার ১২.৯ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে দুই কোটি। ২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে এই হার ছিল ১৭.৬ শতাংশ।