কয়রা উপজেলা নির্বাচনে দুই প্রার্থীকে নিয়ে আ.লীগের মধ্যে চরম বিরোধ
খুলনার কয়রা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র কোন্দল ও বিরোধ দেখা দিয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে তৈরি হওয়া এ বিরোধ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, অন্য দলের প্রার্থী না থাকায় এই বিরোধের কারণে দলের অবস্থান এখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের চেয়েও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, বরাবরের মতোই ভোটের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
আগামী ২৯ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কয়রা উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৭ জন। এর মধ্যে ৯০ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৮৮ হাজার ২১৬ জন নারী ভোটার।
এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তিনজন। তাদের সবাই আওয়ামী লীগের হলেও নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা। তারা হলেন- মোটরসাইকেল প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা এবং আনারস প্রতীকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম। আর বাকি এক প্রার্থী হলেন ঘোড়া প্রতীকে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ এ্যাড. অনাদী সানা। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কয়রা উপজেলায় গত ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যানরা উপজেলার শীর্ষ দুই প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। অন্য দলের প্রার্থী না থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অনেকে এখনো কারো পক্ষ না নিলেও কেউ কেউ কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিভক্ত হয়ে শীর্ষ দুই নেতার পক্ষে নেন।
পথসভা ও উঠান বৈঠকে নেতাকর্মীরা দুই প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন উসকানিমূলক কথাও শোনা যাচ্ছে। এর আগে গত পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকায় দলীয় নেতা কর্মীদের এমন দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়তে হয়নি বলে মন্তব্য করেন একাধিক নেতা কর্মীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান এর অনুসারী। তাঁরও নিজস্ব বলয় আছে। আর বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম এর প্রতি সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ও গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলমের সমর্থন আছে বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। তারও এলাকায় নিজস্ব বলয় আছে। এই দুই বলয়ে ভোটের মাঠ বেশ গরম রয়েছে।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হবে। কারণ কয়রা জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। আর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের কেউ প্রার্থী হননি। তাই প্রার্থীরা জামায়াত বিএনপির ভোটের দিকে নজর দিয়ে সাধারণ ভোটারদের টানার চেষ্টা করছেন।
উপজেলা বিএনপির উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন বাবুল বলেন, বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটার এবার ভোট দিতে যাবে না। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করছেন। কোনো নেতাকর্মী কারো পক্ষে কাজ করলে বা ভোটকেন্দ্রে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ নেতা-কর্মীরা বিভক্তি হয়ে পড়েছে বিষয়টি সত্য। তবে সাধারণ মানুষ ভালোর পক্ষে। আমি দুবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলাম। বিগত পাঁচ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি আশা করছি, জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। আগে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছি। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে আছেন। এবার গণজোয়ার উঠেছে। আমাদের জয় সুনিশ্চিত।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নীশিত রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, এবার অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় সভাপতিকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। আশা করছি বিজয় আসবে৷
খুলনা জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত কুমার অধিকারী জানান, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় কিছুটা গ্রুপিং হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বড় ধরনের কিছু হবে না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সজাগ রয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনি পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আশা করি, ভোটের দিনও শান্তিপূর্ণ থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়রা থানা পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি এম তারিক-উজ জামান বলেন, কয়রায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করা দরকার সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ থাকবে না। ভোট কাটা বা কেন্দ্র দখল করার চিন্তা-ভাবনা যাঁরা করবেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় হবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন