কলারোয়ায় ড্রাগন চাষে দৃষ্টান্ত বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারের
বিষমুক্ত ড্রাগন ফল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন বুয়েট থেকে পাশ করা একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শাহিনুর রহমান নামের ওই প্রকৌশলী ২০বিঘা বিলের জমিতে ড্রাগন ফল চাষ ও উৎপাদন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তৈরি করেছেন অনেকের কর্মসংস্থানও। শাহিনুর রহমান উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের তরুলিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলীর ছেলে। শাহিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাস করে চাকরির পেছনে ছোটেননি তিনি। ঢাকার শ্যামলীতে মিডিয়া সফটওয়ার লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান দাড় করেছেন। তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থপনা পরিচালক। এর পাশাপাশি গ্রামের বাড়ির এলাকায় প্রথমে ১০বিঘা জমিতে মাটি ভরাট করে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেন। ফলনও ভাল হয়। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি আরো ১০বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেন। বর্তমানে সিসি টিভি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত তার ৩টি বাগানে চলতি মৌসুমেও গাছপাকা বিষমুক্ত এই ফল ২০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকরি ব্যবসায়ীরা। আর পাইকরী ব্যবসায়ীরা সেই ফল পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন বাজার-এলাকায়। এছাড়াও ‘ফলের আড়ৎ’ নামে শাহিনুর রহমানের একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে, যেখান থেকে ফলের অর্ডার ও বিপনন করা হয়।
পুত্রের এমনই উদ্যোক্তারূপের গল্প শুনিয়ে তার পিতা শওকত আলী জানান, ‘ছেলে বুয়েট থেকে ২০১৩ সালে সিএসই বিভাগে লেখাপড়া শেষ করেন। চাকরির পেছনে না ঘুরে সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে ৩২জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর গ্রামের বাড়িতে ড্রাগন ফলের প্রকল্পে নিয়মিত ভাবে ১০/১২ জন কাজ করেন। এখন সে সফল একজন ব্যবসায়ী।’
তিনি আরো জানান, ‘করোনাকালীন সময়ের পর গত ৩ বছর ধরে এই বাগান করেছেন তারা। ফল উঠলে নিয়মিত বিক্রি করে থাকেন। গরম মৌসুমের এই ফল এপ্রিল-মে মাস থেকে শুরু করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাদের ৩টি বাগান থেকে মাসে আড়াই হাজার থেকে ৩হাজার কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করে থাকেন।’
ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুর রহমান বলেন, ‘তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করলেও সেখান থেকে সিসি টিভির মাধ্যমে ড্রাগন প্রকল্প পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। ড্রাগন ফলের দাম ও বাজার ভাল হওয়ায় প্রকল্পটি দেখভাল করেন তার পিতা।’
২০বিঘা জমির ড্রাগন বাগানের পরিধি আরো বাড়াতে চান এবং এই ফল বিদেশেও রফতানি করতে চান বলে জানান শাহিনুর রহমান।
যুগিখালী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার তুষার কান্তি সরকার জানান, ‘ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম, ড.জামাল উদ্দীন, সাইফুল ইসলামসহ কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের টিম শাহিনুর রহমানের ড্রাগন ফলের বাগান পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও দেবহাটা কৃষি অফিসার এবং ৫০জন প্রগতিশীল কৃষক এই বাগান পরিদর্শন করেছেন উদ্বুদ্ধ হওয়ার অভিপ্রায়ে।’
কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুভ্রাংশু শেখর দাস জানান, ‘উপজেলায় ১২ জন চাষি ৩ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ করছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ মে.টন।’
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস জানান, ‘একটা স্বপ্ন ও একটা সঠিক সিদ্ধান্ত সমাজের চিত্র পাল্টে দিতে পারে। তরুণ উদ্যোক্তা শাহিনুর যার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার ড্রাগন বাগান নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন