কলেজ বাসে হামলা, ছাত্রীদের গায়ে কালি দিল শ্রমিকরা
হঠাৎ করে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে নাকাল দেশবাসী। রোববার ভোর থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে বিবর্ণ কষ্ট সইতে হচ্ছে পথচারীদের।
দীর্ঘ পথ হেঁটে যেমন কর্মস্থলে যেতে হয়েছে, বিকেলে ফিরতেও হচ্ছে একইভাবে। মাঝে মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত বিআরটিসি বাস পেলেও তাতে বাঁদুড় ঝোলা হয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।
ধর্মঘটীদের হাতে দিনভর রেহাই পায়নি ব্যক্তিগত গাড়ি। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ওপরও চড়াও হয়েছেন কোথাও কোথাও। আটকে তাতে কালি মেখে দেয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও পথচারীদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের।
এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের একটি ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দাবি আদায়ের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, তাদের সঙ্গে অভব্য আচরণের ধিক্কার জানাচ্ছেন সবাই।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘট চলাকালে রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলার কলেজের ছাত্রীদের বহনকারী বাসে হামলা চালান একদল পরিবহন শ্রমিক।
এ সময় তারা বাসচালকের মুখে পোড়া মবিলের কালি লেপন করে দেন। ছাত্রীরা প্রতিবাদ জানালে জোর করে তাদের শরীরেও কালি মেখে দেয়া হয়। বাসটির গ্লাসও ভাংচুর করা হয়।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি পাম্পের কাছে এ ঘটনা ঘটান শ্রমিকেরা। পরে বাসটি সেখানে থামিয়ে আর যেতে দেয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানায়, দুপুর ১২টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকা পার হওয়ার সময় হঠাৎ শ্রমিকেরা বাসটি থামান। তারা চালককে মারধর করেন এবং তার মুখে ও শরীরে কালি লেপে দেন।
পরে এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে কয়েকজন ছাত্রীকেও জোর করে কালি লেপে দেন শ্রমিকেরা। এ সময় তারা অকথ্য ভাষায় ছাত্রীদের গালিগালাজ করেন। পরে কয়েকটি গ্লাস ভাংচুর করে বাস থেকে সবাইকে নামিয়ে দেয়া হয়। তারা হেঁটে গন্তব্যে চলে যান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাসের চালক মজিবর রহমান বলেন, ‘বাসে ৩৮ ছাত্রী ছিল। তারা সবাই সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত। ছাত্রীদের নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় এলে শ্রমিকেরা বাসে হামলা করে ভাংচুর চালায়। পরে তারা ছাত্রীদেরও কালি মাখিয়ে দেয়।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবিবা বলেন, ‘চালক ফোনে আমাকে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছেন। শ্রমিকেরা গাড়ির কয়েকটি গ্লাস ভাংচুর করেছে। ছাত্রীদের গায়েও কালি দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর চালক বাসটি আনতে গেলেও শ্রমিকেরা ছাড়েননি। পরে তিনি বাধ্য হয়ে বাসটি একপাশে রেখেছেন। চালক কলেজে ফিরলে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মো. মঞ্জুর কাদের বলেন, ‘এ ধরনের একটি ঘটনা আমরাও শুনেছি। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, সদ্য সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি আদায়ে রোববার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন মালিক-শ্রমিকেরা।
এই কর্মসূচি সফলে রোববার ভোর থেকে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নেন পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা কোনো গাড়ি চলাচল করতে দিচ্ছেন না। হঠাৎ করে ডাকা এই পরিবহন ধর্মঘটে সারা দেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন