কাচ্চির সাথে খাসির নামে কী খাচ্ছি?
বাসমতী চালের সাথে লুকোচুরি খেলতে থাকা বড় এক টুকরো খাসির মাংস। কাচ্চি বলতে এমন ছবিই সবার চোখে ভাসে। কিন্তু রাজধানীর রেস্টুরেন্টগুলোতে কাচ্চি বিরিয়ানিতে যে খাসির মাংস দেওয়া হয় তা কি আসলেই খাসি?
কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতারা জানালেন, দাম বেশি হওয়ায় হোটেল মালিকরা খাসির মাংস কেনেন না। তারা বছরের শুরুতে ছাগলের মাংসের একটা দাম নির্ধারণ করেন। মাংসের দাম বাড়লে বা কমলেও নির্ধারিত দামেই মাংস বেচা-কেনা করতে হয় হোটেল মালিকদের সঙ্গে।
কারওয়ান বাজারে ১০ বছর ধরে খাসির মাংস বিক্রি করা নাজিম উদ্দিন বলেন: খাসির মাংসের দাম ৭৫০ টাকা। হোটেল কর্তৃপক্ষ কম দামে অর্থাৎ ৫৮০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে মাংস কেনেন। এই দামে ছাগলের মাংস ছাড়া খাসির মাংস পাওয়া সম্ভব না। তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ জেনেশুনেই ছাগলের মাংস কেনেন।
আরেক মাংস বিক্রেতা বললেন প্রায় একই কথা। তিনি বলেন: যারা খাসির মাংস কিনতে চায় ৭৫০ টাকা দিয়েই কেনে। কিন্তু যারা দামাদামি করে তাদের ছাগলের মাংস দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আর হোটেলের লোকজন নিজ থেকেই কম টাকায় ছাগলের মাংস কেনেন।
রাজধানীর নাখাল পাড়ার বনভোজন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জানান, তারা ৫৮০ টাকায় খাসির মাংস কেনেন কাচ্চি বিরিয়ানির জন্য। বনভোজনের সামনেই হাজি রেস্টুরেন্ট। সেখানকার ক্যাশ কাউন্টারে বসা ব্যক্তি জানান, তারা কাচ্চির জন্য খাসির মাংসই কেনেন ৬০০ টাকা প্রতি কেজিতে।
এই টাকায় খাসির মাংস পাওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে তারা বলেন: আমরা বিশ্বাস করে টাকা দেই। তারা খাসি দেয় না ছাগল দেয় তা দেখার সময় আমাদের নেই।
তেজগাঁওয়ের বিজিএমই ভবনের সামনে দেখা যায় এক লোক অনেকগুলো বয়স্ক ছাগল টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এগুলোই জবাই করার পর খাসি হয়ে যায় বলে জানান সেই ছাগল ব্যবসায়ী। তিনি বলেন: ছাগল বেচা-কেনা হয় ঠিকই। কিন্তু ছাগলের মাংস পাওয়া যায় না। জবাই করে চামড়া ছড়ালে সব খাসি হয়ে যায়। মাংস দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা খাসি কোনটা ছাগলের মাংস। ফলে সাধারণ ক্রেতারা খাসির দামে ছাগল খাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা শমশের জানান: এই বাজারে প্রায় দশটা দোকানে প্রতিদিন প্রায় একশ’ ছাগল আর পঞ্চাশটি খাসি জবাই হয়। কেউ এসে ছাগলের মাংস চাইলে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা করে রাখা হয়। খাসির মাংস চাইলে মূল্য পড়ে ৭৫০ টাকা।
খাসির দাম রেখে ছাগল দেওয়া হয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: অনেকেই এই কাজ করে। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। কেউ যদি খাসি বলে ছাগল দেয়, তাহলে ক্রেতার বোঝার উপায় নাই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কারওয়ান বাজার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এস. অজিয়র রহমান বলেন: কারওয়ান বাজারে খাসি ও ছাগলের মাংস আলাদা দামে বিক্রি হয়। এছাড়া নগরীর বেশিরভাগ জায়গায় ছাগলকে খাসি হিসেবে বিক্রি করা হয়। এর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।-চ্যানেল আই
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন