কাজের মাঝেই ঈদ কাটে যাদের

ঈদে প্রিয় মানুষকে কাছে পেয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠলেও এই উৎসবে ছুটি মেলে না হাজারো মানুষের। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকতে হয় তাদের। দায়িত্বের বোঝা নিয়ে উৎসব আনন্দের ঊর্ধ্বে থেকে যায় তাদের ঈদ।

পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত তখন শেরপুরের বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মীদের ঈদ আনন্দ চলে পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে দিয়ে।

ডাক্তার-নার্স: হাসপাতালগুলোতে ঈদের দিনও নির্বিঘ্নে সেবা দেন চিকিৎসক ও নার্সরা। মানবতার সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের ঈদে খুব একটা ছুটি মেলে না। তাই ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের ঈদের ছুটি তেমন একটা মেলে না।

কথা হয় ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের পেশার প্রধান লক্ষ্য সেবা দেয়া। আমরা রোগীদের সেবা দেয়ার মাঝেই ঈদের আনন্দ খুঁজি।

অ্যাম্বুলেন্স চালক: খুব কম সময়ই পরিবারের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ হয়। কারণ ঈদের দিনও অনেক মুমূর্ষু রোগীদের শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

কথা হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক মানিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ঈদের দিনও নিজেকে প্রস্তুত রাখি। রোগ তো আর বলে কয়ে আসে না। রোগী পাওয়া মাত্রই ময়মনসিংহ বা ঢাকার উদ্দেশ্যে আমরা চলে যাই। আর রাস্তা, গাড়ি ও রোগীদের সঙ্গেই আমাদের ঈদ কেটে যায়।

পরিছন্নকর্মী: যাদের কারণে শহরের বাসাবাড়ি পরিষ্কার থাকে তাদেরও ঈদে খুব একটা ছুটি মেলে না। ময়লার গাড়ির একজন চালক জানান, কোরবানির ঈদে এমনিতেই চাপ বেশি। কারণ কোরবানির বর্জ্য থাকে। সেগুলো দ্রুত পরিষ্কার করতে হয়। তাই ঈদের দিনও ডিউটি করতে হয়।

ফায়ার সার্ভিস: গতি-সেবা-ত্যাগ এ স্লোগানে ২৪ ঘণ্টাই নিজের প্রস্তুত রাখেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ঈদে তাদেরও ছুটি খুব একটা মেলে না। কথা হয় শেরপুর স্টেশনের উপ-পরিচালক জাবেদ আহম্মেদের সাথে।

তিনি বলেন, কর্মস্থলেই ঈদের আনন্দ খুঁজি। যদিও পরিবার-পরিজন, নিজের গ্রাম ছেড়ে ঈদ অনেকটা বেদনার, কষ্টের তবুও রাষ্ট্রের সেবায় আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: দায়িত্বের মাঝেই ঈদ আনন্দ খোঁজেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এদের কেউ কেউ ঈদের ছুটিতে গ্রামে যেতে পারলেও অনেকেই ঈদের দিনও থাকবেন কর্মস্থলে। সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দ নির্বিঘ্ন করতে তারা রাত-দিন পরিশ্রম করেন। নাড়ির টানে অনেকে বাসা কিংবা অফিসে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। তাদের সবকিছু নিরাপদে রাখতে নগরজুড়ে দায়িত্ব পালন করনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে ট্রাফিক বিভাগে যারা আছেন তারা ঈদের আগের ও পরের দিনগুলোতে থাকেন প্রচুর চাপে।

সাংবাদিক: এদিকে সারা দেশের ঈদ উদযাপনসহ বিভিন্ন জরুরি খবর পৌঁছে দিতে ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের সাংবাদিক রিশান নাসরুল্লাহ বলেন, ‘জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দিতে আমরা ঈদের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। অফিস শেষে যতটুকুই সময় পাবো পরবর্তী সময়ে বাসায় গিয়ে পরিবারকে সময় দেবো।’

যাদের কারণে শহর থাকে সচল, সড়কে চলে বাস-ট্রাক, ঘুরে শিশু পার্কের রাইড, বাসায় চলে বিদ্যুৎ, কলে পানি আর চুলায় গ্যাস, সচল থাকে টেলিফোন, শহর থাকে পরিচ্ছন্ন, রোগীরা পায় সেবা, তথ্য পায় দেশবাসী; ভালো থাকুক কর্মব্যস্ত সেই মানুষগুলোর অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকা তাদের প্রিয় মুখগুলো।