কালীগঞ্জে পান চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন জহুরুল
দারিদ্রতায় পোড় খাওয়া জহুরুল ইসলাম। একটা সময় তার জীবনে অভাব অনটন লেগেইছিলো। সংসারে দুঃখ ছিলো তার নিত্য সঙ্গী। এসময় কষ্ট লাঘবে স্বল্প পুঁজিতে পান চাষে মনোনিবেশ করেন তিনি। ধৈর্য আর পরিশ্রমে বদলে যেতে থাকে তার জীবন। পানের ব্যাপক ফলনে তার জীবনে নেমে আসা দারিদ্রতা হয় নিরুদ্দেশ। পানের বরজে ভাগ্যের চাকা ঘুরে হাসি ফুটে তার পরিবারজুড়ে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া এই জহুরুল ইসলাম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের নিথক ঢাকাইয়া টারী এলাকার বাসিন্দা।
জহুরুল ইসলামের মতো উপজেলার অনেক কৃষক এখন ধানের পাশাপাশি পান চাষে ঝুঁকছেন। অল্প জায়গা ও কম পুঁজিতে পান চাষ করা যায়। এছাড়া চারা রোপণের কয়েক মাস পর থেকে সারা বছর পান ওঠানো যায় বলে কৃষকরা নিয়মিত বিক্রি করতে পারেন। আর সারা বছর চাহিদা থাকায় অধিকাংশ সময় ভালো দামে পান বিক্রি করে লাভবান হন কৃষকরা। এসব কারণেই মূলত কালীগঞ্জের কৃষকরা পান চাষে আগ্রহী উঠছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানচাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পানের বরজের জন্য জমি চাষযোগ্য করতে সরিষার খৈল ও গোবর, জৈব সার ব্যবহার করে বাঁশের খুঁটিতে পুঁতে মাচান তৈরি করি। তবে পান চাষের জন্য জমি উপযোগী কিনা তা নিয়েও সংশয় ছিল আমার। সেই সংশয় কাটিয়ে এখন সফলতার মুখ দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পান চাষে আমার প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়। এখন প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা এ পানের বরজ হতে আয় হয়। জেলার বাইরেও যায় এ পান।’
পানচাষি পরিমল রায় বলেন, আগে তারা ধান, পাট, আলুর চাষাবাদ করতেন। এখন আবহাওয়ার ওপর ভরসা নেই। ঝড়-বন্যার পানিতে ধান নষ্ট হয়ে যায়, আলুতে ব্লাইড ধরে। ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। কিন্তু পানের দাম সারা বছরই ভালো থাকে। এখানে ঝুঁকি ও খাটুনি কম কিন্তু আয় বেশি। তাই পান চাষ করে তাদের সংসারে অনেক উন্নতি হয়েছে।
একই এলাকার অনূকূল চন্দ্র রায় জানান, ২৭ শতক জমি থেকে তিন মাস পরপর পান তোলা যায়। পান তোলার পর বরজে সেচ, সার, বরজ মেরামত করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এই জমির পান বিক্রি করে বছরে প্রায় ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করা যায়। মৌসুমভেদে পানের দাম উঠানামা করলেও শ্রমিক খরচ কম থাকায় পান চাষে লাভ বেশি।
ওই এলাকার চাষিরা জানান, পান গাছ লাগানোর ছয় মাসের পর থেকেই ফলন পাওয়া যায়। আর একবার লাগানো গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর অনায়াসে সংগ্রহ করা যায় পান পাতা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পানের বাম্পার ফলন হয়। আর ফলন ভালো হলে বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি জানান, পান লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রচুর আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও পান চাষ করতে গিয়ে কৃষক কোন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুত তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন বলেও জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন