কিশোরীদের আতঙ্ক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত
প্রতিবছরই অসংখ্য শিশু-কিশোরীরা ভারতে পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া ওই কিশোরীদের স্থান হচ্ছে বিভিন্ন যৌনপল্লীতে অথবা ভারত পেরিয়ে অন্য দেশ। আবার কারো চোন-কিডনি তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এভাবেই বছরের পর বছর চলে আসছে বলে দাবি করেছে ভারতে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা ‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’। এজন্য তারা সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য বলে মনে করছে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে।
ভারতের পশ্চিমঙ্গের সীমান্ত এলাকার আটটি গ্রামে এক সমীক্ষা চালিয়ে এসব তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার এ সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আটটি গ্রামের প্রায় তিনশ কিশোরী এবং প্রায় দেড়শ মায়ের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা জানাচ্ছেন, মূলত প্রলোভন দেখিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে, এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে, শিশু-কিশোরী পাচার হচ্ছে।
জাস্টিস এন্ড কেয়ারের গবেষণা পরিচালক সায়ন্তনী দত্ত বলছিলেন, ‘আমাদের সমীক্ষার একটা উদ্দেশ্য ছিল এটা জানার যে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ পাচারের ব্যাপারে কতটা জানেন। আমরা দেখেছি তারা সবকিছুই জানেন। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও চুপ করে থাকতে বাধ্য হন। পুলিশ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাচারের ব্যাপারে জানাতে চান না ভয়ে। পাচারকারী বা তাদের দালালরা ওই এলাকাতেই ঘোরে আর তারা ভীষণ ক্ষমতাবান। তাদের যদি শাস্তি না হয়, তখন যিনি খবর দিয়েছেন, তাকেও বিপদের মুখে পড়তে হবে। এই আশঙ্কাতেই চুপ করে থাকেন সবাই।’
এছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সীমান্ত অঞ্চলটি মেয়েদের কাছে, বিশেষত কিশোরীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা ছাড়াও অপহরণ করে বা মাদক খাইয়েও মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা।
অনেক মেয়েই সমীক্ষকদের জানিয়েছে যে তারা স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশনি পড়তে যেতেও ভয় পায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অনেক বাবা-মা তাঁদের মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন যাতে তারা বিপদে না পড়ে, অর্থাৎ পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়ে।
আবার বাংলাদেশ থেকে যাদের পাচার করে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা দেখেছেন যে পাচার হবার বিষয়টি তারা বুঝতেই পারেনি। কিশোরীরা অনুমান করতে পারেনি যে তাদের অন্য দেশে আনা হয়েছে।
সায়ন্তনী দত্তর কথায়, তারা হয়তো ভেবেছে বাংলাদেশেরই কোনও জায়গায় কাজের জন্য বা বিয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতের বেলা যে তাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা পরের দিন সকালে তারা টের পেয়েছে। কিন্তু এদেশে কার কাছে সাহায্য চাইবে, সেটা তারা জানে না।
বিএসএফ’র দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল পি এস আর আঞ্জানিয়েলু বলছিলেন, ‘কারা পাচারের শিকার হয়ে আসছে, আর কারা অনুপ্রবেশ করছে – এই পার্থক্য করাটা বিএসএফ সদস্যদের কাছে খুবই কঠিন। পাচারের বিষয়ে কিছুটা জানা থাকলেও অনেক সময় আমাদের ভুল হচ্ছে, কারণ আমাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ নেই এ বিষয়ে। সবেমাত্র এই বিষয়টা জানতে বুঝতে শুরু করেছি আমরা।’ সূত্র: বিবিসি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন