কুমিল্লার মুরাদনগরে হারিয়ে যাচ্ছে শতবছরের বাঁশ-বেত শিল্প
এক সময় যে শিল্পের পন্য ছাড়া মানুষ চলতে পারতনা, ছিল মানুষের আয়ের একটি বড় উৎস, আজ সে শিল্প কালের পরিক্রমায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে আধুনিক বাহারি পণ্যের ভিড়ে। আর সে রকমই একটি শিল্প মুরাদনগর উপজেলার মাজুর গ্রামের শতবছরের বাঁশ-বেত শিল্প। আদি এই পেশাকে ভালবেসে এখনো আঁকড়ে পরে আছেন মাজুর গ্রামের নম পাড়ার ৪৯টি পরিবার।
তবে বাজারে প্লাষ্টিক আর আধুনিক পন্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারছেনা এ শিল্পের কারগররা। ফলে এ শিল্পের শত বছরের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি কারিগরদের জীবনে চলছে চরম দূর্দশা। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এ শিল্পের কারিগররা।
নম পাড়ার বেতের কারিগর সন্তুস চন্দ্র রায় বলেন, ‘এক সময় এ পেশার অনেক কদর আছিল। এখন এ পেশায় আমাদের আর জীবন চলেনা। বাপ-দাদার আদি ঐতিহ্য বলে এখনো ধরে রেখেছি। দিন শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে নুন আনতে পানতা ফুরায়। বাপের-দাদার জমি-জমা বিক্রি করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনরকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। কাজের চাহিদা না থাকায় ছেলেরা আর এ পেশায় আসতে চায়না। এই পেশার লোক এখন অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।’
নারায়ন চন্দ্র নম তিনিও একজন বেতের কারিগর। সাংবাদিকের কথা শুনে ধান কাটা রেখে বাড়িতে চলে আসেন তিনি। পরনে লুঙ্গী আর মাথায় গামছা দেখে মনে হল ওদের কারনেই বাঙ্গালীর ঐতিহ্য বেঁচে আছে, আজো আমরা বাঙ্গালী।
ওঠোন ভরা ধান রোদে ছড়ানো, বউরা পা দিয়ে ধান উল্টাচ্ছেন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গাছের ছায়ার নিচে খেলা করছে। অন্যদিকে ছোট ভাইয়ের বউ জোটন উঠোনের এক কোণায় বসে বাঁশের বেত দিয়ে ওড়া বানাচ্ছে।
নারায়ন চন্দ্র বলেন, ‘মাটিতে পরে দেখেছি বাঁশ-বেত। বংশানুক্রমে পাওয়া আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র কর্ম হচ্ছে বাঁশবেত। এই বাঁশ-বেত দিয়ে আমরা ওড়া, খারী, জুহিন, ডুলি, জাবার, আন্তা, ডালা, কুলা, চালন, খাচি, পোরা/ডোহি, চাই, চাটা, পাটি ইত্যাদি বানাতাম। এসব দেশী পণ্যের একসময় প্রচুর চাহিদা ছিল। দিন বদলাই গেছে। প্লাষ্টিক ঢুকে আমাদের কদর কমে গেছে। প্লাষ্টিকের দখলে চলে গেছে বাঁশ-বেতের সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। তাই শুধু এ পেশা দিয়ে আমরা চলতে পারছিনা। কাজের চাহিদা কম থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেত শিল্প। আগ্রহ হারাচ্ছে কারিগররা।’
সরকারি কোন আনুদান বা সহায়তার কথা জানতে চাইলে নারায়ন চন্দ্র আক্ষেপ করে জানান, ‘আমরা সরকারি কোন অনুদান/সহায়তা পাইনা। সরকারের কোন লোকই আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয়না। যদি সরকারি সহযোগীতা পেতাম তাহলে বাপ-দাদার ঐতিহ্য এই শিল্পটাকে বাচাইতে পারতাম।’
বাঁশ-বেত শিল্পের আরো কারিগর ও উদ্যোক্তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বাঁশ ও বেত শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আরো আধুনিকায়ন করে যোগপযোগী করলে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই শিল্প। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে মাজুর গ্রামের বেতের কারিগররা।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন