কুয়াকাটায় হোটেলে ঢুকে পর্যটককে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নিলো প্রভাবশালী ৩ নেতা

পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা এক পর্যটককে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল, শ্রমিকদল ও মৎস্যজীবি দলের এক নেতাসহ ৩ নেতার বিরুদ্ধে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) গভীররাতে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল “আপন ভূবনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পর্যটকের নাম বাদল মোল্লা। তিনি বরগুনা জেলার (সদর)পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে তিনি ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন।
প্রভাবশালীদের কবলে পড়া বাদল মোল্লা জানান, তিনি পরিবারের সাথে অভিমান করে গত ১৭ এপ্রিল থেকে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আপন ভূবনে ওঠেন। মন খারাপ থাকায় ১’শ টাকা দিয়ে এক ভ্যান চালককে গাঁজা কিনতে পাঠান তিনি। কিছুক্ষণ পর ভ্যানচালক ফিরে এসে পেপার কাগজে টিস্যু মুড়িয়ে পর্যটক বাদল মোল্লার হাতে দেয়ায় সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত নেতাদের সহযোগি আল-আমিন, মোস্তাফিজ, বেল্লালসহ অজ্ঞাত আরও দু’জন তাকে মারধর শুরু করেন।
পরবর্তীতে পৌর শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম মৃধা, মৎস্যজীবি দলের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ ও ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আবুবক্কর পর্যটক বাদল মোল্লাকে হোটেলের রিসিভশনে নিয়ে আবারও মারধর করেন।
একপর্যায়ে তারা পর্যটক বাদল মোল্লার রুমে গিয়ে ৪ পিস ইয়াবা ও ২২ হাজার টাকা পায়। পর্যটক বাদল মোল্লা ২২ হাজার টাকা হোটেল ম্যানেজার মিজানের কাছে দেন। এ সময় বাদল মোল্লার ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। হোটেল ম্যানেজার মিজানকে হুমকি দিয়ে মৎস্যজীবী দল নেতা আবুসালেহ টাকা নিয়ে ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবক্করকে দেন। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লার মোবাইল ২টি ফিরিয়ে দিয়ে তারা হোটেল ত্যাগ করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে নগরীর পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
হোটেল ম্যানেজার মিজান বলেন, গভীররাতে আমার হোটেলের সামনের রাস্তায় ডাকচিৎকার শুনে গিয়ে দেখি গেস্ট বাদল মোল্লাকে অভিযুক্তরা মারধর করছেন। আমি তাদেরকে হোটেলের রিসিভশনে আসার অনুরোধ করি। কিন্তু রিসিভশনে এসে তারা আমার গেস্টকে আবার মারধর করেন এবং তার কক্ষে প্রবেশ করে টাকা ও দুটি মোবাইল নিয়ে যান। পরবর্তীতে মোবাইল দুটি ফেরত দিলেও টাকা ফেরত দেননি তারা।
ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মোল্লা বলেন, আমার ব্যাগে ২২ হাজার টাকা এবং প্যান্টের পকেটে ছিল এক হাজার ৯’শ টাকা। ব্যাগের ২২ হাজার টাকা আমি হোটেল ম্যানেজারের কাছে দিয়েছি। তার কাছ থেকে তারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি গতকাল থেকে না খেয়ে আছি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত কুয়াকাটা পৌর মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ ঘটনার সাথে জড়িত না দাবী করে বলেন, হোটেল ম্যানেজার আমার কাছে ২২ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি টাকাটা ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আবুবকরের কাছে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আমি জানি না।
ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবকর বলেন, আমি আবুসালেহ’র কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছি। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লাকে ফেরত দিয়ে চলে গেছি।
এদিকে হোটেল কক্ষে বসে শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম মৃধাকে পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন তার সহযোগীরা এমনটাই দাবী করেছেন পর্যটক বাদল মৃধা। তবে জসিম মৃধা বলেছেন তার সামনে কেউ পুলিশ পরিচয় দেয়নি। পর্যটককে মারধরের কথা স্বীকার করে শ্রমিক দলের এই নেতা বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যেই ফয়সালা হয়েছে। পর্যটককে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি মানিক ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সোমবার বিকেলে ফয়সালা হয়েছে। ওই পর্যটককে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা তিনি বলতে নারাজ।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোঃ ফারুক সাংবাদিকদের জানান, যুবদলের কোন নেতা এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো আবাসিক হোটেলে অপরাধ সংঘটিত হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন। সেখানে দলের কোনো নেতাকর্মীর যাওয়ার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। তবে ভুক্তভোগী পর্যটক এখনো থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন