কুড়ে ঘর থেকে রাজ প্রসাদে, ভূমিহীন চাষির ছেলে থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি
ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন রামনাথ কোবিন্দ। কে আর নারায়ণের পর তিনিই দেশটির দ্বিতীয় দলিত রাষ্ট্রপতি৷ বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ক্ষমতা আজ থেকে থাকবে তারই হাতে।
মঙ্গলবার দুপুরে সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে রামনাথ কোবিন্দকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর। শপথের পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন নতুন রাষ্ট্রপতি। মাটির ঘর থেকে আজ রাজ প্রসাদ রাইসিনা হিলস। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মাটির ঘর থেকে আমার যাত্রা শুরু। আমার এই যাত্রা দীর্ঘ দিনের।’
এরপরই নিজেকে সামলে নিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের দেশ ভারতবর্ষ। গোটা বিশ্ব ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট। নিষ্ঠার সঙ্গে সব দায়িত্ব পালন করব। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকব।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, উপ রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের উপস্থিতিতে এ শপথ নেন রামনাথ কোবিন্দ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানর্জীও হাজির হন শপথ গ্রহণের এ আয়োজনে।
রামনাথ কোবিন্দ জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণ, এপিজে আবদুল কালাম, প্রণব প্রণব মুখার্জির পথে হাঁটবেন। এসময় সম্প্রীতির বার্তা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই এক এবং একসঙ্গেই থাকব।
রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ রামনাথ কোবিন্দ বরাবরই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ৭১ বছর বয়সী রামনাথ কোবিন্দ ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের কানপুরের পারাউনখ গ্রামের দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৪ সালে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম সাবিতা কোবিন্দ। তাদের ঘরে দুটি সন্তান, পুত্র প্রশান্ত কুমার ও কন্যা স্বাতী। রামনাথের বাবা মাইকুলাল ছিলেন একজন ভূমিহীন চাষি। ছোট্ট দোকানের উপর নির্ভর ছিল মাইকুলাল কোবিন্দের সংসার। রাম নাথ কোবিন্দ জন্মেছিলেন যে মাটির কুঁড়ে ঘরে যেটি এখন আর নেই।
৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট রামনাথ ৫ বছর বয়সে তার মা’কে হারান। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর রামনাথ প্রতিদিন ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে খানপুর গ্রামে জুনিয়ার স্কুলে পড়তে যেতেন। অদম্য প্রচেষ্টা ও মনোবলকে পাথেয় করে উনি কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্ত ডক্টর অমিত কুমার শ্রীবাস্তব কলেজ থেকে কমার্স নিয়ে বিএ ও আইন পাশ করেন।
কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম. এবং এলএলবি করার পর আইন পেশাকে বেছে নেন তিনি। এরপর ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিস (আইএএস) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দিল্লি চলে যান। পরপর তৃতীয়বারের চেষ্টায় আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
১৯৭৭ সালে দিল্লি হাইকোর্টে সরকারি আইনজীবী হিসেবে তাকে নিযুক্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। টানা তিন বছর ওই পদে কাজ করার পর ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনি পরামর্শদাতা করা হয় কোবিন্দকে। এই পদে টানা ১৩ বছর ছিলেন তিনি।
১৯৭৭ সালেই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন রামনাথ কোবিন্দ। তার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন রামনাথ কোবিন্দ। ১৯৯৮ সালে বিজেপি দলিত মোর্চার সভাপতি নির্বাচিত হন রামনাথ কোবিন্দ। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি কোলি সমাজেরও সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন।
কৃষক পরিবারের সন্তান কোবিন্দের দলিত সমাজের প্রতিনিধিত্ব ভোটের বাক্সে বরাবরই ফসল তুলতে সাহায্য করেছে। উত্তরপ্রদেশে কোবিন্দই ছিলেন মায়াবতীর বিরুদ্ধে বিজেপি-র তুরুপের তাস। দলিত ভোট ব্যাংকের রাজনীতির অংককে মাথায় রেখেই ২০১৫ সালে কোবিন্দকে বিহারের রাজ্যপাল করে বিজেপি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন