কেওড়ার আচারে ভাগ্য ফেরালেন শেফালী!
কেওড়ার টক, ঝাল ও মিষ্টি আচার ও জেলি তৈরি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন বনজীবী নারী শেফালী বিবি। একইভাবে মোম দিয়ে শোপিস ও মোমবাতি তৈরি করে বাজারজাত করেন তিনি।
এতে সংসারের কষ্ট দূর হয়েছে তার।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কোলঘেষে অবস্থিত দাতিনাখালী গ্রামের ছবেদ আলীর স্ত্রী শেফালী বিবি এখন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীদের দৃষ্টান্ত। কারণ তিনি শুধু নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাননি, সুন্দরবনের সুরক্ষা ও বনজীবীদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় এলাকার বননির্ভর নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন দাতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন। শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে করেছেন আত্মনির্ভরশীল। প্রশিক্ষিত এসব বনজীবী নারীও কেওড়ার চকলেট, আচার ও জেলি এবং সুন্দরবনের মধু বয়েমজাত করে তা বিক্রি করে উপার্জন করছেন অর্থ।
এসব পণ্য বিক্রয়ের লভ্যাংশ বাঘের আক্রমণে স্বামী হারিয়ে বিধবা ও বনজীবী নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। তাই সুন্দরবন ও বনজীবীদের নিয়ে কাজ করতে গেলেই ডাক পড়ে শেফালী বিবির।
শেফালী বিবি জানান, সুন্দরবনের কোলে মালঞ্চ নদীর পাড়ে এক টুকরো খাস জমিতে তাদের বাস। গৃহকর্তা ছবেদ আলী বছরের বার মাস সুন্দরবন থেকে মোম, মধু, মাছ, কাঁকড়া, গোলপাতা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কিন্তু তাতে ঠিকমত চলতো না পাঁচজনের সংসার। তাই নিজেই কিছু করার কথা ভাবতে থাকেন।
একপর্যায়ে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের পরামর্শে সুন্দরবনের ফল কেওড়ার টক, ঝাল ও মিষ্টি আচার, জেলি ও চকলেট তৈরি শুরু করেন। একইসঙ্গে মোম দিয়ে শোপিস ও মোমবাতি তৈরি করে বিক্রি করতে থাকেন। এতে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় তার। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সুখ নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেননি এই বনজীবী নারী। স্থানীয় অন্যান্য বনজীবী নারীদেরও এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন দাতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে স্থানীয় অন্যান্য নারীরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বারসিকের কর্মকর্তা মননজয় মণ্ডল বলেন, “বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের মধ্যে প্রচণ্ড মনোবল রয়েছে। যার উদাহরণ শেফালী বিবি। বনজীবী পরিবারের সদস্য হয়েও তিনি সম্পূর্ণ নিজের সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম দ্বারা সমাজে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। শেফালী বিবিদের কর্মকাণ্ডের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নারীর ক্ষমতায়নকে সুদৃঢ় করতে পারে।”
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন