কেমন ছিল সাদ্দামের জীবনের শেষ ছয় মাস

ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জীবনের শেষ ছয় মাস কেমন ছিল? গণহত্যার দায়ে মার্কিন বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে বাগদাদের জেলে কিভাবে সময় কাটাতেন?

এমন নানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে উইল বারডেনওয়েরপারের ‘দ্যা প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস: সাদ্দাম হোসেন, হিজ আমেরিকান গার্ডস অ্যান্ড হোয়াট হিস্ট্রি লিভস আনসেড’ বইটিতে।

জানা যায়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মার্কিন গায়িকা মেরি জে ব্লিজের গান শুনতেন সাদ্দাম। টিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠান দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠতেন। বাগান করতেন, সাইক্লিং মেশিনে শরীরচর্চা করতেন। আর দেদার মিষ্টি খেতে ভালবাসতেন। মাফিন ছিল তার খুব প্রিয়।

উইল লিখছেন, ‘সাদ্দাম সকালের নাস্তায় প্রথমে খেতেন ডিমের ওমলেট, তার পরে মাফিন। সব শেষে তাজা ফল। ওমলেট ছেঁড়া-ফাটা থাকলে কখনওই খেতেন না। আর ছিল ভেজা কাপড়ে জড়িয়ে বাক্সে রাখা কোহিবা চুরুট। কারারক্ষীদের সাদ্দাম বলেছিলেন, তাকে চুরুট খাওয়ার কৌশল শিখিয়ে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।

কারারক্ষীদের গল্প শোনাতেন সাদ্দাম, করতেন নিজের জীবনের গল্পও। সাদ্দাম বলেছিলেন, ‘একটি পার্টিতে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে অনেককে মেরে ফেলেছিল আমার ছেলে উদে। শুনে ওর গাড়িগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। রোলস রয়েস, ফেরারি, পোরশে।’

বলতে বলতে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠতো ইরাকের গদিচ্যুত সম্রাটের। মার্কিন সেনার হাতে ধরা পড়ার সময়েও যার প্রথম কথা ছিল, ‘আমি সাদ্দাম হোসেন। ইরাকের প্রেসিডেন্ট।’

নানা গল্প হতো কারারক্ষীদের সঙ্গে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের প্রথম দিনের গল্প। ছেলেকে সাজা দেওয়ার গল্প। কারারক্ষীদের সঙ্গে কোথায় যেন তৈরি হয় একটা সখ্য। হয়তো তাই সাদ্দামের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে একটা শূন্যতা গ্রাস করেছিল রক্ষীদের অনেককেই। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে, নিজের পরিবারের কেউ মারা গিয়েছে। সেই মৃত্যুর জন্য যেন আমিই দায়ী।’

জীবনের সেই শেষ ছয়মাস বাগদাদের জেলে সাদ্দামের উপরে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন আমেরিকার ৫৫১তম মিলিটারি পুলিশ কোম্পানির ১২ সদস্য। উইল বারডেনওয়েরপার ছিলেন তাদের এক জন। ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতার ফসল সেই বই।