কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপনে আটকা বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন না আসায় আটকে আছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
গত ১১ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখনও প্রজ্ঞাপন জারি না কোটা পদ্ধতি এখনও রয়ে গেছে।
সরকারি কর্মকমিশন-পিএসসির শঙ্কা- প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই একটি নতুন বিসিএসের সার্কুলার দেয়ার চেষ্টা করছি। ৩৮ ও ৩৯ তম বিশেষ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হয়েছে। ৩৬ ও ৩৭ তম বিসিএসের ননক্যাডার নিয়োগের কাজ চলছে। আমরা এখন ৪০ তম নিয়ে কাজ করব।’
‘এই অবস্থায় কোটার বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে আমাদের বিসিএসের নতুন সার্কুলার দেয়ার সহজ হয়।’
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৩০ শতাংশ ছাড়াও ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ পশ্চাদপদ জেলার, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং এক শতাংশ কোটা রয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য।
এই পদ্ধতি সংস্কার করে কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত এপ্রিলে তুমুল আন্দোলনের মুখে এই পদ্ধতি বাতিলকেই শ্রেয় মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দেড় মাসেও এখনও প্রজ্ঞাপন হয়নি।
২৭ জুন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা পাল্টাবে না। তবে এটি বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। তারাই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিবেদন দেবে। এরপর আসবে প্রজ্ঞাপন।
পিএসসির সদস্য সালাহউদ্দিন আকবর বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিসিএস নিয়ে কাজ করছি। ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসের ননক্যাডার এবং ৩৮ ও ৩৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছি। কোটার বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়ায় ৪০ তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে না।’
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই কোটা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। নূন্যতম দুই মাসের আগে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব নয়।
মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সব কিছুই শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এটা নিয়ে যে কমিটি গঠনের কথা ছিল সেটি এখনো হয়নি। ফলে এটা চূড়ান্ত হতে সময় লাগতে পারে।’
‘মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এক্সপার্ট লোক খোঁজা হচ্ছে। এই বিষয়ে জানাশোনা লোক কম। তাই বিকল্প খোঁজায় সময় লাগছে।’
এই পদস্থ কর্মকর্তা জানান, ‘কমিটি গঠন এবং কোটা সংস্কার না বাতিল সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগতে পারে।’
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কোটা নিয়ে কাজ চলছে। আমরা প্রস্তুত আছি। বাকিটা সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।’
৪০ তম বিসিএসে নিয়োগ হবে দুই হাজারের বেশি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, দেড় মাস আগে ৪০ তম বিসিএসের চাহিদাপত্র জনপ্রশাসন থেকে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে।
চাহিদাপত্র অনুযায়ী, দুই হাজারের বেশি পদে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদ ২২৮টি, পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার ৭০টি, পররাষ্ট্র ক্যাডারে সহকারী সচিব ২৫টি, আনসার ক্যাডারে ১২, মৎস্য ক্যাডারে ৩৪৪, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে সহকারী মহা-হিসাবরক্ষক ১৫, শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক পদে প্রায় এক হাজার এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন, কৃষি ক্যাডারের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, সহকারী বন সংরক্ষক, ভেটেরিনারি সার্জন, সহকারী প্রকৌশলী, কর ক্যাডারের সহকারী করকমিশনার, তথ্য ক্যাডার, রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সমমানের পদ, ইকোনমিক ক্যাডারের সহকারী প্রধান, রেলওয়ে পরিবহন ও ডাক ক্যাডারে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল পদে ৫ শতাধিক কর্মকর্তা নিয়োগের কথা রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন